গল্পে অনেক সময় এমনটা হয়। তবে বাস্তব যে অনেক সময়ই গল্পের কল্পনাকে গোল দিয়ে দিতে পারে তার উদাহরণ মধ্যপ্রদেশ স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের প্রায় ৩৮ বছরের পুরনো এক ঘুষ মামলা। ছত্তিসগড় হাই কোর্ট এই মামলায় ওই রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের প্রাক্তন বিল অ্যাসিন্ট্যান্ট জগেশ্বর প্রসাদ আওধিয়াকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে।
ঘটনা জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে গত শতাব্দীর আশির দশকে। ১৯৮৬ সালের ২৪ অক্টোবর অভিযোগকারী অশোক কুমার বর্মা লোকায়ুক্তের কাছে এই অভিযোগ জানান যে জগেশ্বর প্রসাদ আওধিয়া তাঁর ১৯৮১-৮৫ সালের বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য ১০০ টাকা ঘুষ চেয়েছেন। পরদিন লোকায়ুক্তের দল অপারেশন চালিয়ে ৫০ টাকার দুটি নোটে ফিনলফথ্যালিন পাউডার মাখিয়ে আওধিয়ার হাতে দেয়। পরে রাসায়নিক পরীক্ষায় নোটগুলি পজিটিভ প্রমাণিত হয়।
১৮ বছর পরে, ২০০৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ট্রায়াল কোর্ট আওধিয়াকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ১,০০০ টাকা জরিমানার সাজা দেয়। আওধিয়া এই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন। তাঁর আইনজীবী কেশব দেওয়াঙ্গন যুক্তি দেন যে অশোক কুমার বর্মার অভিযোগ মিথ্যে। পাশাপাশি বলা হয় ওই অভিযোগের সময় আওধিয়ার বকেয়া মঞ্জুর করার কোনও ক্ষমতাই ছিল না। তাঁর এই মঞ্জুর করার প্রকৃত অনুমোদন আসে ১৯ নভেম্বর ১৯৮৬-তে, অর্থাৎ ঘটনার প্রায় এক মাস পর।
তবে বছরের পর বছর গেছে, সেই মামলা চলতেই থেকেছে। এবার হাই কোর্ট রায়ে জানিয়েছে, শুধুমাত্র নোট উদ্ধারের ওপর ভিত্তি করে ওই দোষ প্রমাণ করা যায় না। ঘুষের দাবির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই এবং নোট একশো টাকার ছিল নাকি দুটি পঞ্চাশ টাকার এই গুরুত্বপূর্ণ অসঙ্গতিও প্রসিকিউশনের মামলাকে দুর্বল করেছে। আদালতের মন্তব্য, “ঘুষের দাবি এবং সচেতনভাবে গ্রহণের প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র নোট উদ্ধারের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করা আইনি দিক থেকে টেকসই নয়।”
ফলে উচ্চ আদালত ট্রায়াল কোর্টের রায় ও সাজা বাতিল করে আওধিয়ার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস করে দিয়েছে। এখন মধ্যপ্রদেশ স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের সেই জগেশ্বর প্রসাদ আওধিয়া একজন ৮৩ বছরের প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী। অবশেষে মুক্তি পেলেন কর্মজীবনের এক কলঙ্কময় অভিযোগ থেকে।