বুধবার লেহ-তে লাদাখের রাজ্য মর্যাদা এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে হওয়া বিক্ষোভ হিংসার রূপ নিলে অন্তত চারজন নিহত ও ৭০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। প্রথমে দাবি জানিয়ে লাদাখের লেহতে বিক্ষোভ শুরু হলেও সেই বিক্ষোভ পরে অন্যরকম চেহারা নেয়।
লেহ অ্যাপেক্স বডির যুব শাখার ডাকে চলছিল এই বিক্ষোভ কর্মসূচি। পরিবেশ ও জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুক ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ দিনের অনশনে বসে মঙ্গলবার তা শেষ করলেও বুধবার ছিল বিক্ষোভের দিন। পরিস্থিতি তীব্র আকার নেয় যখন অনশনরত দুই অংশগ্রহণকারীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ক্ষুব্ধ যুবকদের একাংশ পাথর ছুড়তে শুরু করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে ভিড় ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তার পরই পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। লেহ এপেক্স বডির চেয়ারম্যান চেরিং দর্জে জানান যে টাউন এলাকায় প্রবল গুলিবর্ষণের ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
বিক্ষোভের সময় স্থানীয় বিজেপি কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি একটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্ফু জারি করা হয়েছে। অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দর গুপ্ত বুধবার জানান যে হিংসা ও সংঘর্ষের জেরে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লেহ জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। এই সংঘর্ষে চারজন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। তিনি এই সংঘর্ষকে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন। লেফটেন্যান্ট গভর্নর জানিয়েছেন, যখন বিক্ষোভকারীরা পুলিশ গাড়ি ও বিজেপি কার্যালয়ে হামলা করে তখনই নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালায়। গুপ্ত অভিযোগ করেন, “যারা এই বিক্ষোভ উসকে দিয়েছে তারাই আজকের মৃত্যুর জন্য দায়ী।”
এদিকে সমর্থকদের উদ্দেশে সোনম ওয়াংচুক শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি যুবকদের অনুরোধ করেছেন অগ্নিসংযোগ বন্ধ করতে। তাঁর মতে, হিংসার মাধ্যমে কোনও আন্দোলনের সাফল্য আসে না। যদিও কেন্দ্র সরকার লাদাখে চারজনের মৃত্যু ও বহুজনের আহত হওয়ার ঘটনায় সোনম ওয়াংচুককেই দায়ী করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “বহু নেতা অনশন প্রত্যাহারের আহ্বান জানালেও তিনি তা চালিয়ে গেছেন এবং আরব স্প্রিং ধাঁচের আন্দোলন ও নেপালে ‘জেন জেড’দের প্রতিবাদের উল্লেখ করে জনগণকে উসকে দিয়েছেন।” সরকারি সূত্রের দাবি, লাদাখের পরিস্থিতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাতের বাইরে যায়নি; এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।
৫ আগস্ট, ২০১৯-এর আগে পর্যন্ত লাদাখ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অংশ ছিল। ৩৭০ ধারা বাতিলের পর লাদাখ একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়ে ওঠে এবং তা সরাসরি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ৩৭০ ধারা বিলোপের পর থেকেই রাজ্যের মর্যাদা ও সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবি লাদাখের অন্যতম বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়দের মতে বাস্তুতন্ত্র, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ও আদিবাসী জনসংখ্যা রক্ষায় এই বিশেষ মর্যাদা অত্যন্ত জরুরি।