মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছেন, গর্ভাবস্থায় প্যারাসিটামল (অ্যাসিটামিনোফেন বা টাইলেনল) খাওয়া উচিত নয়। তিনি বলেছেন, এতে শিশুদের অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু এই মন্তব্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাঁদের মতে, এই ধরনের মন্তব্য মহিলাদের মধ্যে ভয় ও বিভ্রান্তি তৈরি করবে, যা বিপজ্জনক হতে পারে।
প্যারাসিটামল কি সত্যিই অটিজম ডেকে আনে? প্রশ্নের জবাবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, না। অটিজম মূলত জিনগত কারণে হয়। তবে গবেষকরা পরিবেশগত প্রভাব যেমন মায়ের বয়স, প্রিম্যাচিউর জন্ম, সংক্রমণ বা কিছু ওষুধের প্রভাব এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখছেন।
প্যারাসিটামল ১৯৫০ সাল থেকে নিরাপদ ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এনএইচএস (NHS) এটিকে গর্ভাবস্থায় প্রথম পছন্দের ওষুধ হিসেবে সুপারিশ করে। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, প্যারাসিটামল খাওয়া মায়েদের মধ্যে অল্প কিছু ক্ষেত্রে অটিজমের ঝুঁকি সামান্য বেশি। তবে তার মানে এই নয় যে, প্যারাসিটামলই অটিজমের সরাসরি কারণ। স্পষ্ট জানিয়েছে, প্যারাসিটামল গর্ভাবস্থায় খেলে অটিজম হয়, এমন কোনও প্রমাণ নেই।
অনেক সময় গবেষণায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়। যেমন, বয়স্ক মহিলাদের সন্তানদের অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু বয়স্ক মহিলারা ব্যথার কারণে বেশি পেইনকিলারও খেয়ে থাকেন। কিছু রোগ যেমন হাইপারমোবিলিটির সঙ্গে অটিজমের সম্পর্ক আছে। এই রোগে ব্যথা বেড়ে গেলে প্যারাসিটামল খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়। তাই এই ধরনের অবস্থায় মনে হতে পারে যে প্যারাসিটামলই ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, অথচ আসল কারণ অন্য।
সুইডেনে ১৯৯৫-২০১৯ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া ২৪ লাখ শিশু নিয়ে করা সবচেয়ে বড় গবেষণায় দেখা গেছে, মায়েরা প্যারাসিটামল খেলে ১.৫% শিশু অটিজমে আক্রান্ত হয়েছে। আর যারা খাননি, তাদের মধ্যে হার ছিল ১.৩%। ভাইবোনদের মধ্যে তুলনা করলে কোনও পার্থক্য পাওয়া যায়নি। তাই গবেষকরা বলেছেন কোনও কারণগত সম্পর্ক নেই। একই রকম ফল জাপানের এক গবেষণাতেও পাওয়া গেছে।
তাহলে অটিজমের হার কেন বাড়ছে?
৪০ বছর আগে প্রতি ১০,০০০ জনে মাত্র ৪ থেকে ৬ জনের অটিজম ধরা পড়ত। এখন বিশ্বের অনেক দেশে এই হার ১% থেকে ৩%। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন অটিজম শনাক্তকরণে ডাক্তাররা আরও সচেতন। আরও বিস্তৃত আচরণগত বৈশিষ্ট্যকে অটিজমের আওতায় আনা হয়েছে। তাই প্রকৃত সংখ্যা তেমন না বাড়লেও ডায়াগনোসিস বেড়েছে।
অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিনা রিপন বলছেন, অটিজমকে ‘মারাত্মক রোগ’ বা ‘মহামারি’ হিসেবে দেখানো অটিস্টিক কমিউনিটির জন্য অপমানজনক।
এরই মধ্যে অনেকের মতে, ট্রাম্পের মন্তব্য হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক।বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের মন্তব্য মহিলাদের মধ্যে অকারণ ভয় সৃষ্টি করবে। যদি মহিলারা ব্যথা বা জ্বরের সময় প্যারাসিটামল না খান, তবে মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকি তৈরি হবে। দীর্ঘ সময় জ্বর থাকলে বড় সমস্যা হতে পারে। গর্ভবতী মহিলারা এমনিতেই ওষুধ নিয়ে ভয় পান। এতে তাদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ আরও বাড়বে।
অনেক দেশে প্রসবের সময়ও মূল ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল ব্যবহার হয়। এটি বাদ দিলে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রণা, PTSD এমনকি সিজারিয়ানের চাহিদাও বেড়ে যেতে পারে।
FDA (Food and Drug Administration) টাইলেনল-এর লেবেলে সতর্কবার্তা দিচ্ছে, অটিজমের সঙ্গে “সম্ভাব্য সম্পর্ক” থাকতে পারে। তবে তাঁরা পরিষ্কার জানাচ্ছেন, কারণগত সম্পর্ক এখনও প্রমাণিত নয়। তাই প্যারাসিটামল গর্ভাবস্থায় সাধারণত নিরাপদ। এটি অটিজম ঘটায় বা এমন কিছু প্রমাণ গবেষণায় মেলেনি।
তবে সব ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থায় কোনও ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরী।