”কেন এখনও পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকর হয়নি ?” বিয়ন্ত সিং হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা পাওয়া বলবন্ত সিং রাজোয়ানাকে ঘিরে প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বাব্বর খালসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলবন্ত সিং রাজোয়ানা। তাঁর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমানোর আবেদন ঘিরে সুপ্রিম শুনানিতে এমন প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালতের ৩ বিচারপতির বেঞ্চ।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সন্দীপ মেহতা এবং বিচারপতি এন ভি অঞ্জারিয়ার বেঞ্চ বুধবার, শুনানি পর্বে কেন্দ্রের আইনজীবীকে রীতিমতো তুলোধোনা করেছে। সরাসরি জানতে চাওয়া হয় ফাঁসির সাজা কার্যকর না হওয়ার পেছনে দেরির দায় কার। একই সঙ্গে জানানো হয়, আদালত কিন্তু মৃত্যুদণ্ডে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি।
কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কে এম নটরাজ আদালতে জানান, এই হত্যাকাণ্ডের মামলাটি অত্যন্ত গুরুতর। ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রীকে তখন হত্যা করা হয়েছিল। যার জেরে গোটা পঞ্জাবে দাঙ্গাও ছড়ায়। ফলে কেন্দ্রকে সিদ্ধান্ত নিতে আরও কিছুটা সময় দেওয়া হোক।
বলবন্ত সিং রাজোয়ানার আইনজীবী মুকুল রোহতগি আদালতে বলেন, তাঁর মক্কেল ফাঁসির সাজার বিলম্বের কারণে সেই ২০১২ সাল থেকে মুক্তির আবেদন করেছেন। তিনি আরও বলেন, রাজোয়ানা ২৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। এবং এই ১৫ বছর ধরে মৃত্যুদণ্ডের সাজা মাথায় নিয়ে জেলবন্দি।
প্রসঙ্গত, বিয়ন্ত সিং হত্যা মামলায় পঞ্জাবের পুলিশ কর্মী বলবন্ত সিং রাজোয়ানাকে ২০০৭ সালে ভারতীয় দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ১২০-বি, ৩০২, ৩০৭ ধারা এবং ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক পদার্থ আইনের ৩(বি), ৪(বি) এবং ৫(বি) ধারা ৬-এর অধীনে দোষী সাব্যস্ত করে বিশেষ কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো আদালত।
১৯৯৫ সালের ৩১ আগস্ট চণ্ডীগড় সচিবালয় কমপ্লেক্সে এক মারাত্মক আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় পঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিং সহ ১২ জন নিহত হন। ২০০৭ সালে বিশেষ সিবিআই আদালত রাজোয়ানাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে। ২০১২ সালে শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটি রাজোয়ানার হয়ে দয়া প্রার্থনা করে।
২০১৯ সালে কেন্দ্র গুরু নানকের ৫৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সাজা আজীবন কারাদণ্ডে কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। ২০২০ সালে রাজোয়ানা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন, যাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, তাঁর মুক্তি বা সাজার হেরফের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নষ্ট করতে পারে, তাই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানি পর্বে রাজোয়ানার হয়ে সওয়াল করতে নামা সিনিয়র আইনজীবী রোহতগি বলেন, “আইন প্রয়োগে এভাবে অনন্ত বিলম্ব হতে পারে না। যদি অপরাধ এত গুরুতর হয়, তাহলে অনেক আগেই তাঁকে ফাঁসি দেওয়া উচিত ছিল।” তাঁর আরও মন্তব্য, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মৃত্যুদণ্ডের ছায়ায় বেঁচে আছেন রাজোয়ানা।
দুপক্ষের বক্তব্য শুনে শীর্ষ আদালতের তিন বিচারপতির বেঞ্চ কেন্দ্রকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী ১৫ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী ও চূড়ান্ত শুনানি। ফলে সেদিনই একরকম নিস্পত্তি হতে পারে বলবন্ত সিং রাজোয়ানার ভবিষ্যৎ।