তামিলনাড়ুতে রাজনৈতিক জনসভায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পদক্ষেপ করল স্থানীয় পুলিশ। তামিলাগা ভেত্রি কাজগম (টিভিকে) প্রধান ও অভিনেতা-রাজনীতিক বিজয়ের নির্বাচনী সমাবেশে কারুরে ভয়াবহ পদপিষ্টের ঘটনায় অন্তত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন কমপক্ষে ১৬ জন মহিলা ও ১০টি শিশু। পুলিশ জানিয়েছে, অতিরিক্ত ভিড় ও বিশৃঙ্খলার কারণে বহু মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
কারুর জেলা পুলিশ ইতিমধ্যেই পৃথক এফআইআর দায়ের করেছে দলের সাধারণ সম্পাদক আনন্দ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমারের বিরুদ্ধে। এডিজিপি (ল’ অ্যান্ড অর্ডার) এস ডেভিডসন দেবাসিরভাথম বলেন, “৩৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একটি মামলা রুজু হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু হবে।”
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ নেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের রাজ্যের ইতিহাসে কোনও রাজনৈতিক দলের আয়োজিত কর্মসূচিতে এত প্রাণহানি ঘটেনি। ভবিষ্যতে যেন এরকম না হয়। বর্তমানে ৫১ জন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।”
মুখ্যমন্ত্রী মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও আহতদের জন্য ১ লক্ষ টাকা সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর বিজয় সামাজিক মাধ্যমে শোকপ্রকাশ করেন। তবে তিনি সরাসরি দায় স্বীকার করেননি। পোস্টে তিনি লেখেন, “আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। আমি অসহনীয় বেদনা ও শোকে আচ্ছন্ন। কারুরে প্রাণ হারানো আমার প্রিয় ভাই-বোনদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সমাবেশের জন্য অনুমতিপত্রে ১০ হাজার মানুষের জমায়েতের অনুমান করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সেখানে উপস্থিত হন। সন্ধ্যা ৭.৩০ থেকেই ভিড়ের চাপে বিশেষ করে নারী ও শিশুরা অজ্ঞান হতে শুরু করেন। বিজয় মঞ্চে বক্তব্য থামিয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের জন্য পথ খালি করার অনুরোধ করেন।
এই সমাবেশ ছিল বিজয়ের ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারাভিযানের অংশ। বিজয় ভাষণে দাবি করেছিলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক চিত্রপট বদলে যাবে। কিন্তু প্রচার সভা শেষ পর্যন্ত রাজ্যের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পদপিষ্টের ঘটনায় পরিণত হয়।
পুলিশ বিজয়ের চেন্নাইয়ের বাসভবনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা মোতায়েন করেছে।