
টানা ভারী বৃষ্টিতে ভূমিধস ও বন্যায় বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। দার্জিলিং, কালিম্পং এবং মিরিকের পার্বত্য অঞ্চলে ভয়াবহ ধসের কারণে বহু এলাকা একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বানভাসি হয়েছে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার। প্রাণহানির ঘটনাও আতঙ্ক ধরিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের দুর্যোগ পরিস্থিতিকে ‘রাজ্য বিপর্যয়’ (State Levet Disaster) ঘোষণার আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা।
চিঠিতে রাজু লেখেন, “দার্জিলিং, তরাই এবং ডুয়ার্স সংলগ্ন অঞ্চলে বৃষ্টির জেরে তৈরি হওয়া ভূমিধসকে দয়া করে রাজ্যস্তরীয় বিপর্যয় হিসাবে ঘোষণা করুন। বিজেপি সাংসদের দাবি, এই ঘোষণা হলেই কেন্দ্রের তরফে অতিরিক্ত সাহায্য ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার রাস্তা খুলে যাবে। একইসঙ্গে তিনি এই ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত পরিসংখ্যান কেন্দ্রকে জানানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছেন, যাতে রাস্তাঘাট, কৃষিজমি ও জনজীবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা কেন্দ্র জানতে পারে।
কেন তিনি এটিকে ‘রাজ্য বিপর্যয়’ ঘোষণা করার কথা বলছেন, তার ব্যাখ্যাও চিঠিতে দিয়েছেন দার্জিলিঙের পদ্ম সাংসদ। শুধু তাই নয়, বিপর্যস্ত এলাকার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার অনুরোধও করেছেন চিঠিতে। রাজুর দাবি, ২০২৩ সালে তিস্তার বন্যাকে ‘বিপর্যয়’ ঘোষণা করেনি রাজ্য সরকার। তার ফলে ওই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তেরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। এবার যেন সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না-হয়, সেই কথা মনে করিয়ে দিয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন দার্জিলিঙের সাংসদ।
তিনি আশাবাদী, বৃষ্টি এবং ধসে উত্তরবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্তেরা যাতে সব রকম সাহায্য পান, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা ও সহযোগিতা করে ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিকাঠামো পুনর্গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা করা হবে।

উত্তরবঙ্গের দুর্যোগ নিয়ে রবিবারই উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয় সেখানকার পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যালোচনা করতে সোমবারই সেখানে পৌঁছেছেন। উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। নবান্ন সূত্রে খবর, শিলিগুড়িতে থেকে আপাতত উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতির উপর নজর রাখবেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের ঠিক আগেই পাহাড়ের বিজেপি সাংসদের এমন চিঠি কিন্তু রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়েছে। দুর্যোগের ভরা আবহে কেন্দ্র বনাম রাজ্যের এমন দড়ি টানাটানি খুঁচিয়ে তোলা মোটেই কাম্য ছিল না বলে মনে করছেন উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ পাহাড় ও সমতলবাসী।