
প্রবল দুর্যোগে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গে দুর্গত মানুষদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন বিজেপির দুই নেতা। নাগরাকাটা এলাকায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। বিজেপি এই হামলার পিছনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাত দেখলেও তা অস্বীকার করেছে রাজ্যের শাসকদল।
লাগাতার ভারী বর্ষণে গোটা পূর্ব হিমালয় অঞ্চল বিপর্যস্ত। দার্জিলিং জেলায় প্রবল বৃষ্টির জেরে ব্যাপক ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। বহু বাড়িঘর চাপা পড়েছে, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ভেঙে পড়েছে এবং দুর্গম গ্রামগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতেই সোমবার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান খগেন মুর্মু ও শঙ্কর ঘোষ। তাঁদের কনভয় দুর্যোগকবলিত নাগরাকাটার বামনডাঙা এলাকায় পৌঁছলে একটি গাড়ি সামনের দল থেকে পিছিয়ে পড়ে। ঠিক তখনই কয়েকশো মানুষ নদীর ধারে জড়ো হয়ে পাথর ছুড়তে শুরু করে বলে অভিযোগ।
শঙ্কর ঘোষের ফেসবুক লাইভে দেখা গেছে, খগেন মুর্মুর মাথা, কপাল, গাল ফেটে রক্ত ঝরছে। গাড়ির সব কাচ ভেঙে গেছে। পিছনের সিটে শুয়ে রয়েছেন তিনি। সামনের সিটে বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। রক্তাক্ত অবস্থায় মুর্মুকে চালসা হাসপাতালে নিয়ে যান শঙ্কর। সেখানেই তাঁর প্রাথমিক চিকিত্সা করা হয়। পরে তাঁকে শিলিগুড়িতে নিয়ে আসা হয়।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সাংসদ ও বিধায়ক দুর্গত মানুষদের সঙ্গে যখন কথা বলছিলেন, তখনই হঠাৎ এই আক্রমণ হয়। ঘটনাস্থলে না থাকলেও বিজেপি রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য, দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা সহ দলীয় প্রতিনিধিরা ওই এলাকাতেই উপস্থিত ছিলেন।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য সোমবার সকালেই বাগডোগরায় পৌঁছন। বাগডোগরা থেকে খগেন মুর্মু, শঙ্কর ঘোষ, দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা এবং বিজেপির প্রতিনিধিদের একটি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির উদ্দেশে রওনা হয়। নাগরাকাটার কাছে বামনডাঙায় মুর্মু এবং ঘোষ যে গাড়িতে ছিলেন, গাড়ির কনভয় এগিয়ে যাওয়ায় তাঁরা পিছনে পড়ে যান। তখনই কয়েকশো মানুষ গাড়িটিকে ঘিরে ফেলে, নদীর তীর থেকে পাথর তুলে ছুড়ে মারে ও হামলা চালায়। শঙ্কর ঘোষের দাবি, সে সময় নদীর ওপারে বোটে চেপে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ দিতে গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।
খগেন, শঙ্করের ওপর কেন এই হামলা তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও বিজেপির দাবি, যারা হামলা চালিয়েছে তারা তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী। তাদের ছবি দিয়ে একটি পোস্টও করেন কলকাতার বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। বিজেপির এই দাবি সরাসরি অস্বীকার করেছে শাসক দল। তৃণমূল নেতা ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন যে এই ধরনের হামলা সমর্থনযোগ্য নয় এবং তার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়েই এই প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। উদয়ন গুহ প্রশ্ন তুলেছেন, ওদের কারও হাতে কি তৃণমূলের পতাকা ছিল? তাঁর দাবি, আসলে সাংসদ-বিধায়ক হিসেবে ওঁরা ব্যর্থ। মানুষ তাঁদের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছে। অন্যদিকে তৃণমূল নেতা ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষের অভিযোগ, ওখানে বিজেপি নেতারা ত্রাণ নিয়ে যাননি, গিয়েছিলেন দুর্যোগের সময়ে ফটোশ্যুট করতে। তাই এলাকার মানুষ তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে।