
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন আজ এক অদৃশ্য বিপদের মুখোমুখি। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস আর নদীভাঙনের বিরুদ্ধে যে সবুজ দেওয়াল বহু দশক ধরে উপকূলবাসীর সুরক্ষা দিয়ে এসেছে, সেই অরণ্যেই বাড়ছে পোকামাকড়ের আক্রমণ। বহু অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ হঠাৎ শুকিয়ে যাচ্ছে, পাতাহীন ডালপালা ঝুলে পড়ছে, আর জঙ্গলের ভেতর তৈরি হচ্ছে উদ্বেগজনক ফাঁকা এলাকা। আগে যেখানে বাদাবন এতটাই ঘন ছিল যে রোদ মাটিতে পৌঁছত না, এখন সেখানে মাঝখান দিয়ে আলো চলে আসছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে ঝড়ের সময় ভরসা থাকবে তো এই সবুজ বর্মে?
ম্যানগ্রোভ শুধু ঝড়ের গতি কমায় এবং নদীর ঢেউ ভাঙে না, এটি উপকূলের বন্যপ্রাণীর সুরক্ষাও দেয়। মাছ, কাঁকড়া থেকে শুরু করে নানা প্রজাতির পাখি ও প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয় এই বন। কিন্তু গাছ কমে গেলে জলোচ্ছ্বাসের সরাসরি প্রভাব পড়বে গ্রামাঞ্চলে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গোসাবা, ক্যানিং, বাসন্তী, ঝড়খালি, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা ও সাগরদ্বীপ সব এলাকাই এখন এই হুমকির সামনে দাঁড়িয়ে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারি দপ্তর ও মুক্তি নামে একটি সংস্থার পরিবেশ বিভাগ মিলে ক্ষতিগ্রস্ত ম্যানগ্রোভ এলাকাগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞ দল বিভিন্ন ব্লকে ক্ষতির মানচিত্র তৈরি করছে এবং কোন এলাকায় কোন ধরনের পোকামাকড় বেশি আক্রমণ করছে তা চিহ্নিত করছে। বিশেষ স্পিডবোটে করে তারা জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে নজরদারি চালাচ্ছে।
পরিবেশবিদদের মত, এই সংকটে কোনোভাবেই রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা চলবে না। এতে ম্যানগ্রোভ রক্ষাকারী সহায়ক পোকাও মারা যেতে পারে, ফলে ক্ষতি আরও বাড়বে। তাই পরিবেশবান্ধব ও জৈব উপায়েই সমাধান খুঁজতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি দপ্তর ও বেসরকারি সংস্থাগুলির সমন্বিত উদ্যোগই পারে এই বিপুল বাদাবনকে রক্ষা করতে।
এখন চোখ সকলের একটাই জৈব উপায়ে কি সত্যিই থামানো যাবে এই নীরব শত্রুদের দাপট? সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ তারই ওপর নির্ভর করছে।
