স্নিগ্ধা চৌধুরী
রাত নামলেই একসময় আকাশভরা তারা ফুটে উঠত। সপ্তর্ষিমণ্ডল, কালপুরুষ কিংবা ধ্রুব! সব ছিল চেনা বন্ধুর মতো। কিন্তু এখন যেন শহরের আকাশে তারা নেই! কলকাতার রাত আজ নিঃসঙ্গ, নিস্তব্ধ! আলোকদূষণের ভারে তারা ঢাকা পড়ে গিয়েছে অদৃশ্য এক চাদরে।
জ্যোতির্বিদ্যার বইয়ের পাতা জুড়ে ছড়ানো যে তারামণ্ডলের গল্প, বাস্তবের শহুরে আকাশে তা কেবল স্মৃতি। আধুনিক কলকাতার ঝাঁ-চকচকে রাস্তাঘাট, গগনচুম্বী অট্টালিকা, এবং সারারাত জ্বলে থাকা অপ্রয়োজনীয় আলো যেন আকাশের স্বাভাবিকতা কেড়ে নিচ্ছে। টেলিস্কোপের লেন্সও আজ অসহায়! আলোক ও ধূলিকণার ছায়া ভেদ করে তারাদের দেখা মেলে না।
বিজ্ঞানীরাও চিন্তিত। শহরের আলো ব্যবস্থায় কোনও পরিকল্পনার ছাপ নেই। কোথায় কতটা আলো দরকার, তা না ভেবেই জ্বলে যাচ্ছে অজস্র বাতি। পরিবেশবিদদের মতে, এ এক প্রকার ‘আলোক-জঞ্জাল’। এর ফলেই আকাশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তারা, অন্ধকার রাতও হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য।
এম পি বিড়লা তারামণ্ডলের মতো জায়গা, যেখানে মানুষ তারাদের সন্ধানে আসে, তারাও এখন নিরাশ। সম্প্রতি বিরল এক গ্রহ সমাগম ঘটেছিল, যেখানে সাতটি গ্রহ এক সরলরেখায় দেখা যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দিগন্তরেখায় বাধা হয়ে দাঁড়াল অট্টালিকা ও গাছের সারি। কলকাতাবাসী বঞ্চিত হল এক মহাজাগতিক মুহূর্তের সাক্ষী হওয়া থেকে।
শহরের শিশুরা আজ তারার গল্প শোনে, কিন্তু তারা দেখা হয় না। এ এক গভীর ক্ষয়! শুধু প্রকৃতির নয়, মানুষের কল্পনাশক্তিরও।
যদি এখনই আলো ব্যবস্থায় সচেতনতা না আনা যায়, আগামী প্রজন্মের কাছে তারা শুধু গল্পের চরিত্র হয়েই থাকবে। আর শহরের আকাশ, হারিয়ে ফেলবে নিজের আসল রূপ।
