জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়াড়া, বারামুলা, উরি এবং আখনুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় এলওসি বা নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে বিনা প্ররোচনায় গুলিবর্ষণ জারি রেখেছে পাকিস্তান। এ নিয়ে পাকসেনা টানা ১৪ দিন ধরে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে চলেছে। ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জবাবে পাক সেনার ছোঁড়া গোলায় চার শিশু-সহ মোট ১৩ জন সাধারণ মানুষ এবং এক সেনা নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানের গোলাবর্ষণ থেকে রেহাই পায়নি গুরুদ্বার, হনুমান মন্দির, মাদ্রাসাও। বুধবার রাতভর পাকিস্তানের দিক থেকে গোলাবর্ষণ জারি ছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘৭ থেকে ৮ মে, ২০২৫-এর রাতের দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চৌকি থেকে বিনা প্ররোচনায় ছোট অস্ত্র ও আর্টিলারি গান ব্যবহার করে কুপওয়াড়া, বারামুলা, উরি এবং আখনুর এলাকায় গোলাবর্ষণ চালায়। ভারতীয় সেনাবাহিনী তার সমুচিত জবাব দেয়।’
জম্মুর পুঞ্চে সীমান্ত পার থেকে পাকিস্তানের গুলিবর্ষণে শহিদ হয়েছেন হরিয়ানার দীনেশকুমার শর্মা। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সাইনি সমাজমাধ্যমে এই তথ্য তুলে ধরে ধরে লেখেন, ‘দেশের প্রতিটি নাগরিক আপনার জন্য গর্বিত। দেশ কখনওই আপনার এই আত্মত্যাগ ভুলবে না। শহিদকে জানাই স্যালুট।’
অপারেশান সিঁদুরের সাফল্যের পর থেকেই ফুঁসছিল পাকিস্তান। ৭ মে, বুধবার ভোরে ভারত ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) ন’টি জঙ্গিঘাঁটিতে। এই ন’টি জঙ্গিঘাঁটির মধ্যেই ছিল লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম) এবং হিজবুল মুজাহিদিন (এইচএম)-এর সদর দফতর। পাকিস্তানের এই গোলাবর্ষণের উপযুক্ত জবাব দিতে তৈরি ভারতীয় সেনা। পাকিস্তানকে মুখের মতো জবাব দেওয়ার ছাড়পত্রও পেয়ে গিয়েছে সেনা। ফলে নতুন করে আবার পাক জঙ্গিঘাঁটিতে ভারত আক্রমণ করে কি না সেটাই এখন দেখার।
গত ২২ এপ্রিল, টিআরএফ জঙ্গিরা ‘মিনি সুইৎজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গুলির শব্দ শোনা মাত্রই পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং দিগ্বিদিক ছুটতে শুরু করেন। কিন্তু খোলা জায়গা হওয়ায় কোথাও লুকোনোর সুযোগ ছিল না। ছিল না কোনও নিরাপত্তা। সে দিন বেছে বেছে মারা হয়েছিল ২৬ জন পর্যটককে। ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর এই হামলা কাশ্মীরে অন্যতম বড় সন্ত্রাসবাদী হামলা। জবাবে, ২৪ এপ্রিল থেকে ভারত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করে দেয়। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানি সেনা জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিভিন্ন স্থানে প্রবল গুলিবর্ষণ শুরু করে। অপারেশান সিঁদুরের পর তার তীব্রতা আরও বাড়ে।
