আর জি কর এর পর ফের কসবায় কলেজে গণধর্ষণ। যা নিয়ে আবার বেশ রথের ঘন্টা ধ্বনি আর জয় জগন্নাথের মাঝেই হৈ চৈ আর হুল্লোড় পড়ে গেছে গোটা রাজ্যে জুড়েই। বেশ ভালো ব্যাপার কিন্তু এটা পক্ষ কাল পড়ে যেমন পূর্ণিমা আর অমাবস্যা আসে ঠিক তেমনি করেই আর জি কর এর সেই অত্যাচার হওয়া মেয়ের বিচার স্তিমিত হতে না হতেই, সেই মেয়েটির বাবা আর মায়ের কান্নার চোখের জল শুকোতে না শুকোতেই সেই রাত জাগার আন্দোলন Reclaim the Night এর ঝাঁজ কমে যেতেই ফের কসবা কাণ্ড উপস্থিত হয় আমাদের চোখের সামনে।
যেখানে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ ‘কুঁচো’ নেতার ছোট্টো উপস্থিতি আমাদের ফের উদ্বেলিত করে। আর যার জন্য রথের মেলা ছেড়ে তড়িঘড়ি দলীয় কার্যালয়ে বসে তৃণমূলের সাংবাদিক বৈঠক করে সাফাই দিতে হয় গম্ভীর মুখে থমথমে চোখ নিয়ে ভাবটা এমন আমরা সত্যিই এই ঘটনায় খুব চিন্তিত যা আমরা একদম অনুমোদন করি না। আমরা সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করেছি, ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে এই সব কথা অকপটে বলতে হয় মিডিয়ার সামনে। আর তারপরেই নানা প্ল্যান ফন্দি আর ফিকির আঁটতে হয় এই ঘটনার অভিঘাত থেকে, দীঘার সমুদ্রের ঢেউ থেকে কি করে গায়ে জল না লাগিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হয় শাসক দলকে তার জন্য।
সত্যিই অসাধারণ কিন্তু এই মা মাটি আর মানুষের সরকার আর সেই সরকারের অধীনে বাস করা মাটির মানুষদের ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তা। যাঁরা জানেন না তাঁদের ঘরের মেয়ে আর বউ সেই লক্ষ্মী ভান্ডারের টাকা আর অনুদান পাওয়া মেয়েরা কতটা সুরক্ষিত এই বঙ্গ রাজ্যে। যে মেয়েটি আপন মনে নীল সাদা সবুজ সাথী সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায় সে জানেই না সে এই গ্রাম বাংলায় কতটা সুরক্ষিত। যে নারী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব সময় বদ্ধপরিকর আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। আসলে আমার মনে হয় একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর পর পর তিনবার ক্ষমতা দখল করে থাকার পরেও আর জি কর, আর কসবা কাণ্ড আমাদের কেমন যেন একটা ভয় ধরিয়ে দেয়। যে ভয় আমার আর আপনার ঘরে প্রবেশ করে রাতের অন্ধকারে ঠিক বিষধর সাপের মতই হামাগুড়ি দিয়ে। যে সাপ ঘুরে বেড়ায় আমাদের চারপাশে এই নানা রূপে। যাঁদের চেনা যায় না কিছুতেই আর চিনতে পারলেও কিছুই বলা যায় না তাঁদের।
কারণ সবাই যে যার মতো করেই বেঁচে থাকে এই শাসক দলের ছাতার আশ্রয়েই নিভৃতে যতনে আর নিরাপদে। আর তারা যখন ধরা পড়ে হৈ চৈ হুল্লোড় পড়ে যায় সেই সময় তাঁদেরকে সাংবাদিক সম্মেলন করে ক্ষমা না করে আড়াল না করে ছেঁটে ফেলার চেষ্টা করা। এই তো হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে এর কোনো ব্যতয় হয়নি কোনো কালে কোনো আমলেই। সেই লাল পার্টির বাম আর ঘাস ফুলের সবুজ মাঠের তৃণমূল আমল এক্ষেত্রে সবাই এক। আর সেই এই সব নানা কান্ড দেখে দুর থেকে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করা গেরুয়া কাপড়ে নিজেদের মুড়ে ধোপদুরস্ত অবস্থান রক্ষা করে গা বাঁচিয়ে চলা বিজেপি আবার মাঠে নেমে পড়ে ধূর্ত শৃগালের মতো। চার বা পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে, রাস্তায় নেমে পড়ে, হৈ হুল্লোড় করে, থানায় থানায় পুলিশের সাথে ধাক্কা ধাক্কি আর ধ্বস্তাধ্বস্তি করে, মনে মনে ভাবে এই বার হয়তো রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা হবে এই বঙ্গে ভোররাতে তাঁরা সবাই স্বপ্নও দেখে। ভোটের সময় বলে এইবার দুশো পার। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না বিরোধীরা কিছুতেই তাঁদের স্বপ্ন সফল হয় না কিছুতেই।
কি করে যে এত অত্যাচার জুলুম আর নারী নির্যাতন করেও তৃণমূল ক্ষমতায় ফিরে আসে সেই ঘরের মেয়েদের ভোট বেশি পেয়েই কে জানে। আসলে এটাই হলো রাজনীতির মাঠের নয়া সমীকরণ। যেখানে দেওয়া আর নেওয়া আছে এই direct cash transfer আছে সেখানে কি আর এইভাবে ঘরের মেয়ে নির্যাতিতা হলেও সবাই মিলে রুখে দাঁড়ানো যায়। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দাঁড়িয়ে বলা যায় মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত নয় যে রাজ্যে সেখানে ভোট চাওয়ার অধিকার কি আছে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আসলে সবটাই যে রাজনীতির বৃত্তে ঘুরপাক খায় আমাদের জীবন, যৌবন, বার্ধক্য আর আমাদের ঘরের মেয়েদের নিরাপত্তা। সেখানে এই আর জি কর আর কসবা যে ‘ছোট্টো’ ঘটনা। যে ঘটনায় বাংলার মেয়ের ইজ্জত লুটিয়ে পড়ে কিন্তু সরকার লুটিয়ে পড়ে না কিছুতেই। তাই যাই ঘটে যাক আমাদের বলতে হয় ভয়ে ভয়েই জয় বাংলা। জয় মা মাটি মানুষের জয়। জয় তৃণমূলের জয়।