অনুরাগীদের মন জয় করলেন বলিউড তারকা সঞ্জয় দত্ত। অভিনেতা সম্প্রতি নিশ্চিত করেছেন যে তিনি ২০১৮ সালে এক ভক্তের রেখে যাওয়া ৭২ কোটি টাকার সম্পত্তি তাঁর পরিবারকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে পর্দার ‘মুন্নাভাই’কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, একজন মৃত্যু পথযাত্রী মহিলা নাকি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি সঞ্জয় দত্তের নামে উইল করে গিয়েছিলেন। সঞ্জয় দত্ত সরলভাবে উত্তর দেন, “আমি ওটা ওঁর পরিবারের কাছেই ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।” এই ঘটনার কথা সামনে আসতেই অভিনেতার এই মানবিক ও সংবেদনশীল আচরণে মুগ্ধ হয়ে উঠেছেন নেটিজেনরা।
যাঁকে নিয়ে কথা হচ্ছে সেই ভক্তের নাম নিশা পাটিল। মুম্বইয়ের ৬২ বছর বয়সি এক গৃহবধূ। তিনি বহু বছর ধরে সঞ্জয় দত্তের কেরিয়ার ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করতেন। অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করছিলেন নিশা এবং ২০১৮ সালে তিনি শিরোনামে উঠে আসেন। জানা যায় তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি, যার মূল্য প্রায় ৭২ কোটি টাকা, সঞ্জয় দত্তের নামে উইল করে গিয়েছেন। এমনকী নিজের ব্যাঙ্কেও তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন যে, মৃত্যুর পর তাঁর সমস্ত সম্পত্তি যেন সঞ্জয় দত্তের নামে হস্তান্তরিত করা হয়। এই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তে অবাক হয়ে যান খোদ সঞ্জয়ও। তবে, অর্থের পরিবর্তে সহানুভূতি ও সম্মান বেছে নিয়ে, তিনি সেই সম্পূর্ণ উত্তরাধিকার ফেরত দিয়ে দেন নিশার আইনসম্মত পরিবারকে। সম্প্রতি সেই কথা এক সাক্ষাৎকারে নিজের মুখেই স্বীকার করে নেন তিনি। নেটমহলে প্রশংসিত অভিনেতার এই পদক্ষেপ।
১৯৮১ সালে ‘রকি’ ছবি দিয়ে বলিউডে পা রাখেন সঞ্জয় দত্ত, যাঁর জীবন নিঃসন্দেহে অত্যন্ত নাটকীয় ও ঘটনাবহুল। ‘নাম’, ‘খলনায়ক’, ‘সাজন’, ‘বাস্তব’—এমন একাধিক হিট ছবির মাধ্যমে তিনি বলিউডে নিজস্ব স্থান পোক্ত করেন। তবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল চড়াই-উতরাইয়ে ভরা। ১৯৯৩ সালে, মুম্বই বিস্ফোরণের ঘটনায় বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে তাঁকে টেররিস্ট অ্যান্ড ডিসরাপ্টিভ অ্যাক্টিভিটিস (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট বা টাডার আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও সেই অভিযোগ থেকে তিনি অব্যাহতি পান, তবে অস্ত্র আইনে দোষী সাব্যস্ত হয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, যে সাজা তিনি ২০১৬ সালে সম্পূর্ণ করেন। কিন্তু এরপর তাঁর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার গল্প অনবদ্য। ২০০৩ সালের ‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’ ছবিতে তাঁর অভিনয় মন জয় করে সিনেপ্রেমীদের। তাঁর জীবনের উপর ভিত্তি করেই নির্মিত হয় ২০১৮ সালের ব্লকবাস্টার বায়োপিক ‘সঞ্জু’, মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন রণবীর কাপুর।
২০২৫ সালে সঞ্জয় দত্ত আবারও তাঁর কেরিয়ারের ব্যস্ত পর্ব উপভোগ করছেন। এই বছরই তাঁর একাধিক ছবি মুক্তি পেতে চলেছে— ‘ভূতনি’, ‘হাউসফুল ৫’, ‘অখণ্ড ২’, ‘ধুরন্ধর’ এবং ‘দ্য রাজাসাব’। পাশাপাশি ২০২৬ সালে মুক্তির জন্য প্রস্তুত কন্নড় ছবি ‘কেডি – দ্য ডেভিল’। রুপোলি পর্দায় যতই তিনি ব্যস্ত থাকুন না কেন, এই ধরনের মানবিক ঘটনা প্রমাণ করে যে তাঁর ব্যক্তিত্বের গভীরে রয়েছে এক সংবেদনশীল, সহানুভূতিশীল মন—যিনি সংবাদ শিরোনামের চেয়ে মানবিকতাকেই বেশি গুরুত্ব দেন।