গুরুতর অপরাধে গ্রেফতার হলে সাধারণ মন্ত্রী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, এমনকী প্রধানমন্ত্রীকেও তাঁর পদ থেকে অপসারণ করা হবে। এমনই বিল আনছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই বিলের বিরোধিতা করল তৃণমূল কংগ্রেস। সংবিধান সংশোধনী এই বিল নিয়ে কড়া ভাষায় বিজেপিকে আক্রমণ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের অভিযোগ, যে সব রাজ্যে বিরোধীদের সরকার, তাদের ফেলতে সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি।
সংবিধান সংশোধনী বিলের তীব্র বিরোধিতা করে অভিষেক বলেন, “বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে না। এই সরকার শুধু ক্ষমতা ও সম্পদ কুক্ষিগত করতে চাইছে। এই সরকার স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে চলছে। দেশবাসীকে স্বস্তিতে থাকতে না দিয়ে তাদের ক্রমশ গভীর সমস্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শ্রমিক, কৃষক, সাধারণ মানুষকে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোদি সরকার তা পূরণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এমনকী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বও তারা যথাযথভাবে পালন করতে পারছে না।”
এক্স পোস্টে অভিষেকের অভিযোগ, মোদি সরকার নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধনের নামে বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই কাজে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাই এবার তারা ইডিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন বিরোধী শাসিত রাজ্যে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংস্থাকে সামনে রেখে বিরোধী নেতাদের নিশানা করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করছে মোদি সরকার। তাদের লক্ষ্য হল, বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির সরকারকে উপড়ে ফেলা।
অভিষেক আরও অভিযোগ করেন, বিজেপিকে ভোট দেওয়ার অর্থ দেশকে বিক্রি করে দেওয়া। দেশের সংবিধানকে অসম্মান করা। বিজেপির কিছু লোক দেশটাকে নিজেদের সম্পত্তি বলে মনে করছে। অভিষেকের দাবি, বি আর আম্বেদকর ও মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে গড়া ভারত কখনই তার আত্মাকে ক্ষমতালোভী শাসকের হাতে তুলে দেবে না।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার অমিত শাহ লোকসভার সচিবালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, চলতি অধিবেশনে পাস করানোর জন্য তিনটি সংবিধান সংশোধনী বিল আনা হবে। ওই বিলগুলি হল ২০২৫ জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধনী) বিল, ২০২৫ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সরকার (সংশোধনী) বিল এবং সংবিধান (১৩০তম সংশোধনী) বিল। এই সংবিধান সংশোধন বিল অনুযায়ী যদি প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রী ৫ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডযোগ্য কোনও অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ৩০ দিন হেফাজতে থাকেন তবে ৩১তম দিনে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপাল এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীকে সরানোর দায়িত্ব পাবেন। কারণ গুরুতর কোনও অপরাধে অভিযুক্ত হলে সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী সেটা সুশাসন ও জন-আস্থার পরিপন্থী। কিন্তু বর্তমান আইনে এমন কোনও ধারা নেই যে অভিযুক্তদের অপসারণ করা সম্ভব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এই পদক্ষেপকে সংস্কারের দিক থেকে এক বড় পরিবর্তন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। কারণ বর্তমান আইনে গ্রেফতার হওয়া কোনও মন্ত্রীকে সরানোর স্পষ্ট নির্দেশ নেই।
Leave a comment
Leave a comment
