গ্রামের তালাবন্ধ ঘরে রমরমিয়ে চলছে নিষিদ্ধ মারণ ড্রাগের কারখানা। কোটি কোটি টাকার সিন্থেটিক ড্রাগ তৈরি হচ্ছে সেখানে। কারখানায় তৈরি প্যাকটে বন্দি মাদক, পরে ট্রাকে চেপে ছড়িয়ে পড়ছে শহর-শহরতলিতে। রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদফতরের (Directorate of Revenue Intelligence)-এর আচমকা হানায় পর্দাফাঁস। মাদক কারখানাটির সঙ্গে ডি কোম্পানির যোগসূত্রও আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা দেশে।
মধ্যপ্রদেশের ভোপালের উপকণ্ঠে শান্ত গ্রাম জগদীশপুরা। গত ১৬ আগস্ট এই গ্রামেই হুলস্থুল কাণ্ড। সদলবলে গ্রামে ঢুকেছে রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের একটা গোটা দল। গ্রামের তালবন্ধ ১১ নম্বর বাড়িটি নাকি নিষিদ্ধ মাদক তৈরির একটা আস্ত কারখানা। গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে রীতিমতো চমকে যান ডিআরআই কর্তারা। কারণ, শুধুমাত্র নিষিদ্ধ মাদকই নয়, কারখানাটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিও।
রীতিমতো আটঘাট বেঁধে তৈরি হয়েছিল জগদীশপুরা গ্রামের মাদক কারখানাটি। কমবেশি ৭ বছর ধরে পরিত্যক্ত বাড়িটিতে কারখানাটি তৈরি করা হয়। যার নির্মাণেও ছিল পেশাদারিত্বের ছাপ। ছিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড মিক্সিং মেশিন, রাসায়নিক চুল্লি, তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রিত চেম্বার। গুজরাতে প্রশিক্ষিত ফার্মেসি ডিপ্লোমাধারী ফয়সাল কুরেশি এবং তার সহযোগী রাজ্জাক খান কারখানাটির পরিচালনার দায়িত্ব ছিলে। দুই অভিযুক্ত যথাক্রমে অশোকনগর এবং বিদিশার বাসিন্দা।
গোয়েন্দা দলের তল্লাশিতে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৬২.২০ কিলোগ্রাম তরল মেফেড্রন(MD) আর ৫৪১ কেজিরও বেশি মাদক তৈরির নানান রাসায়নিক। ডিআরআই কর্তারা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র বাজেয়াপ্ত লিকুইড মেফেড্রনেরই দাম কমবেশি ৯২ কোটি টাকা। তদন্তে ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে, মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের সবচেয়ে কুখ্যাত সহযোগী সেলিম দোলার নির্দেশে চলত মাদক কারখানাটি। ডি কোম্পানির নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সেলিম দোলা তুরস্কে বসেই এটি পরিচালনা করত।
রাজস্ব গোয়েন্দা দফতর সূত্রে খবর, কুখ্যাত চোরাকারবারি ইকবাল মিরচির একসময়ের বিশ্বস্ত সহযোগী এই সেলিম দোলা। মুম্বই এবং গুজরাতে ডি-কোম্পানির পুরনো যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে তুরস্ক থেকে নিষিদ্ধ মাদকের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। সেলিম দোলার ভাগ্নে মুস্তাফা কুব্বাওয়ালার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস জারি রয়েছে। ভোপাল উপকণ্ঠে জগদীশপুরা গ্রামের মাদক কারখানার সঙ্গে মুস্তাফারও যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি ডিআরআই আধিকারিকদের।
একটা সময় গোটা মুম্বই-এর অন্ধকার জগত কাঁপিয়ে রাখত দাউদ ইব্রিহিম। অস্বাভাবিক চাঁদার জুলুম, চুক্তিতে হত্যা আর গ্যাংওয়ার আতঙ্কে রাখত দেশের বাণিজ্যি রাজধানীকে। পরে কড়া পুলিশি নজরদারি ও কঠোর পদক্ষেপে কোণঠাসা হয়েছে মুম্বই-এর আন্ডারওয়ার্ল্ড। তবে মুম্বই থেকে পাততাড়ি গোটালেও নেটওয়ার্ক চালু রেখেছে দেশজুড়ে। ভোপালের জগদীশপুরায় মাদক কারখানার হদিশ তারই জলজ্যান্ত প্রমাণ।
জগদীশপুরা কাণ্ডে সুরাট এবং মুম্বই থেকে ৫ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা ডি কোম্পানির প্যান ইন্ডিয়া ওয়েবে অপারেটিভ। মাদক কারখানায় গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের জেরা করে মিলেছে বেশ কিছু তথ্য। আর সেই তথ্য রীতিমতো উদ্বেগ বাড়িয়েছে দেশের নারকোটিক্স বিভাগকে। কারণ শুধু মধ্যপ্রদেশ জুড়েই নয়, কারখানায় তৈরি মাদক অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়েছে।
শুধুমাত্র একটা অভিযানে কমবেশি ১০০ কোটি টাকা মূল্যের মাদক উদ্ধার। বিভাগীয় কর্তাদের বক্তব্য, এটি কেবল হিমশৈলের চূড়া মাত্র। তাঁরা বলছেন, আন্ডারওয়ার্ল্ডও এখন নিত্যনতুন পথ খুঁজে নিয়ে সক্রিয় হয়েছে দেশে দেশে। আগের মতো আর গুলি-রক্ত ঝরিয়ে নয়, কব্জা করে নিচ্ছে মাদকের নেশা ধরিয়ে। তাদের টার্গেট তরুণ প্রজন্ম। তাই সজাগ না থাকলেই পদে পদে বিপদ।
