ক্রিকেটের সব ধরনের ফর্ম্যাট থেকে অবসর নিলেন চেতেশ্বর পুজারা। ৩৭ বছর বয়সী ভারতীয় ব্যাটার তাঁর অবসরের কথা জানিয়েছেন এক্স হ্যান্ডেলে। এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টে লিখেছেন, “দেশের জার্সি পরা, একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া এবং মাঠে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা… এর প্রকৃত অর্থ কী তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। কিন্তু সমস্ত ভাল জিনিসেরই একটা দাঁড়ি টানা দরকার। তাই অপরিসীম কৃতজ্ঞতার সঙ্গে জানাই, সমস্ত ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি”।
৩৭ বছর বয়সী পুজারার জাতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেক সেই ২০১০ সালে। ভারতের হয়ে ১০৩টি টেস্ট এবং ৫টি ওডিআই খেলেছেন। টেস্টে করেছেন ৭,১৯৫ রান। যার মধ্যে রয়েছে ১৯টি সেঞ্চুরি এবং ৩৫টি হাফ সেঞ্চুরি। টেস্ট গড় ৪৩.৬০। ঘরের মাঠে তাঁর টেস্ট রান ৩৮৩৯, গড়ে ৫২.৫৮। তিনি ২৭৮টি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে ৫১.৮২ গড়ে ২১৩০১ রান করেছেন। যেখানে রয়েছে ৬৬ টি সেঞ্চুরি এবং ৩ টি ট্রিপল সেঞ্চুরি।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে, তিনি ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ৩ নম্বর ব্যাটসম্যান ছিলেন। দেশে এবং বিদেশে দলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। শেষ টেস্ট খেলেন ২০২৩ সালের জুনে ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল।
২০২৩-এর ওভাল টেস্টের পর থেকে তাঁর আর জায়গা হয়নি টেস্ট দলে । টপ অর্ডারে তখন তাঁর বদলে অন্যদের দেখে নিচ্ছে জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচক কমিটি। লাল বলের ক্রিকেট কিন্তু তখনও চুটিয়ে খেলছেন পুজারা। সৌরাষ্ট্রের হয়ে রঞ্জি ক্রিকেট এবং কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে সাসেক্সের হয়েও। ২০১২ সালের আগস্টে হায়দরাবাদে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে করেছিলেন প্রথম টেস্ট শতরান। মাস দুই পরে ঘরের মাঠেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেন এবং তারপরে ওয়াংখেড়ে টেস্টেও একটি সেঞ্চুরির ইনিংস গড়েছেন।
২০১৩ সালে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ড্র টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রায় ৬ ঘন্টা ব্যাট করে তিনি ১৫৩ রান করেন। টেস্ট ক্রিকেটে বিদেশের মাটিতে তাঁর এমন পারফরম্যান্স নজর কেড়েছিল তাবড় ক্রিকেটপ্রেমীদের। ২০১৫ সালে কলম্বোতে আরেকটি দীর্ঘ সময় ধরে খেলার কীর্তি রয়েছে পুজারার। কলম্বোয় তিনি ওপেনিং করতে নেমে ২৮৯ বলে ১৪৫ রান করেন। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডে সাউদাম্পটনের সিমিং পিচে দাঁড়িয়ে অপরাজিত ১৩২ রান করেন প্রথম ইনিংসে। ভারতের প্রথম ইনিংসে কোহলির ৪৬ রান ছিল পরবর্তী সেরা স্কোর। দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫১ রান করেন। তা সত্ত্বেও সেই টেস্টে হেরে যায় ভারত।
টেস্ট ক্রিকেটে ঘরের মাঠে দীর্ঘ সময় ব্যাট করারও নজির গড়েছেন পুজারা। রাঁচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি ৬৭২ মিনিট ব্যাট হাতে ছিলেন বাইশ গজে। আর ৫২৫ বল খেলে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। রাঁচিতে টেস্টের পাঁচ দিনই তিনি ব্যাটিং করেছেন। পুজারার আগে এমন কৃতিত্ব দেখিয়েছেন এমএল জয়সীমা এবং রবি শাস্ত্রী।
অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের পরপর দুটি সিরিজ জয়ের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে চেতশ্বর পুজারার। ২০১৮-১৯ সালে তিনি অ্যাডিলেড, মেলবোর্ন এবং সিডনিতে তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ঐতিহাসিক প্রথম টেস্ট সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল তাঁর ব্যাটিং। পরের অস্ট্রেলিয়া সফরে তিনি প্যাট কামিংস, জশ হ্যাজেলউড এবং মিচেল স্টার্কের মতো বোলারদের বিরুদ্ধে ৪ টি টেস্টে ৯২৮ বল খেলেছেন। ব্রিসবেনে ২১১ বলে ৫৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলার সময় অজি পেসারদের দুরন্ত বোলিং তাঁর শরীরেও ছোবল বসিয়েছে। ভারতের বিখ্যাত অ্যাওয়ে টেস্ট জয়ের একটি ছিল সেটি।