বাংলার রাজনীতিতে আবার আগুন। আদালতের কড়া দরজার আড়ালে এবার খোলা হচ্ছে পুরনো ক্ষত। বিজেপি নেতা ও অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী ঠেলে দিলেন ১০০ কোটির মানহানির মামলা, আর নিশানায় একটাই নাম! তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তবে এই মামলার আসল উত্তাপ শুধু মানহানি নয়, বরং এক ভাঙা সম্পর্কের প্রতিশোধে জ্বলে ওঠা দীর্ঘদিনের রক্তক্ষত।
মিঠুন–কুণাল দ্বন্দ্ব যেন এক রাজনৈতিক থ্রিলার। একসময় ঘনিষ্ঠতা ছিল, কুণাল কাজ করতেন মিঠুনেরই সংস্থায়। কিন্তু সেই ঘনিষ্ঠতাই নাকি ভাঙনের বীজ বুনেছিল। অভিযোগ ওঠে, কুণালের হাতেই সংস্থার টাকা তছনছ হয়েছিল। মিঠুন সেই সময় থেকেই কুণালের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সম্পর্কের বিশ্বাস ভেঙে যাওয়ার পর থেকে তাদের দ্বন্দ্ব রাজনীতির মাঠে এসে দাঁড়িয়েছে মাইক্রোফোন বনাম নায়ক! এই দুই মঞ্চের সংঘর্ষে।
এখন অভিযোগ, কুণাল ঘোষ রাজনৈতিক মঞ্চে লাগাতার কাদা ছুড়ছেন মিঠুন ও তাঁর পরিবারকে লক্ষ্য করে। চিটফান্ড থেকে ব্যক্তিগত জীবনের নানা অভিযোগ, সবই নাকি ছড়ানো হয়েছে কুণালের মাইকে। এর ফলেই নষ্ট হয়েছে বিজ্ঞাপনের চুক্তি, হাতছাড়া হয়েছে চলচ্চিত্রের সুযোগ। তাই আদালতে মিঠুনের আরজি কুণালকে গুনতে হবে ১০০ কোটি টাকার মূল্য। যদিও প্রশ্ন জাগছে যেখানে কোর্ট ফি জমা হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা, সেখানে আসল লড়াই কি সম্মানের, নাকি প্রচারের আলো টানার?
অন্যদিকে কুণালের উত্তর যেন আরও আগুনে ঘি ঢালে, “আমার কাছে নথি আছে, আদালতেই সব ফাঁস করব।” তিনি যেন প্রতিদিন নতুন ফাইল হাতে ঘুরে বেড়ানো এক রাজনৈতিক সৈনিক। কিন্তু মানুষের মনে সন্দেহ, এই ফাইলগুলো আসলেই কি তথ্যসমৃদ্ধ, নাকি শুধু গল্পের মোড়ক মুড়ে ভোটের বাজারে ছড়ানো আওয়াজ?
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই মামলা এখন হয়ে উঠেছে এক কনট্রোভার্সির রণক্ষেত্র। মিঠুনকে কেউ বলেন ‘দলবদলের খেলোয়াড়’, আবার অনেকের কাছে তিনি এখনও অমলিন নায়ক। কুণালের পরিচয়ও দ্ব্যর্থহীন, চিটফান্ড কেলেঙ্কারির দাগে ভিজে থাকা এক নাম, আজ তিনি দলের মুখ। নিজের অতীত কাদা ধুয়ে ফেলতে না পেরে অন্যকে নোংরা ছুড়ে দেওয়াতেই কী তাঁর বিশেষ দখল?
কোর্টরুমে এই দ্বন্দ্বের আগুন কতদূর ছড়াবে, তা সময় বলবে। তবে এতটা নিশ্চিত, এ মামলা কেবল ১০০ কোটির মানহানির হিসেব নয়, বরং পুরনো আস্থার ভাঙন, বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ আর রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ির এক বিস্ফোরক কাহিনি। এখন কেবল অপেক্ষা, আদালত এই নাটকের রায় দেবে, নাকি শেষ পর্যন্ত এ-ও কেবল বাংলার রাজনৈতিক বাজারে ছড়িয়ে পড়া আরেকটা শব্দই থেকে যাবে।
