২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচন যত এগোচ্ছে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তাঁর অন্যতম প্রধান ইস্যু হিসেবে তুলে ধরছেন “ভোট চুরি” অভিযোগ। তিনি দাবি করছেন, নির্বাচন কমিশনের এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারা দেশেই ভোট চুরির ঘটনা ঘটছে। তাঁর ভাষায়, এটি “ভোট চুরির প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা”। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই কৌশল কি মহাগঠবন্ধনের জন্য আশীর্বাদ, নাকি আত্মঘাতী পদক্ষেপ?
রাহুল সম্প্রতি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, কর্নাটকের একটি আসনে অবৈধভাবে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে এবং মহারাষ্ট্রের একটি আসনে নতুন ভোটার যোগ করা হয়েছে। তিনি ঘোষণা করেন, ইতিমধ্যেই তিনি “অ্যাটম বোমা” ফেলেছেন, আর তাঁর কাছে থাকা “হাইড্রোজেন বোমা” তিনি পরে প্রকাশ করবেন।
তবে কংগ্রেস ও বিরোধী শিবিরের অনেকেই মনে করছেন, রাহুলের এই হাই-ভোল্টেজ ভাষা ও কৌশল উল্টে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে।
আরজেডি নেতা ও প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব বিহারের মাটির সঙ্গে যুক্ত ইস্যু, যেমন বেকারত্ব, অভিবাসন,অপরাধ বৃদ্ধি, সরকারি পরিষেবার ভাঙন, প্রশ্নপত্র ফাঁস – এসব নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁর বিহার অধিকার যাত্রাতেও মূল সুর ছিল রাজ্যের স্থানীয় সমস্যাগুলো।
অন্যদিকে রাহুল গান্ধীর ভোটার অধিকার যাত্রা প্রায় পুরোপুরি কেন্দ্রীভূত এসআইআর এবং “ভোট চুরি” প্রসঙ্গে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এটি বিহারের মানুষের কাছে বড় ইস্যু নয়।
‘ভোট ভাইব’-এর বিহার ইলেকশনস ২০২৫ ভলিউম-২ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মাত্র ২১% মানুষ এসআইআর কে ভোটের প্রধান ইস্যু হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে ৩২% মানুষ বেকারত্বকে সবচেয়ে বড় সমস্যা বলছেন। অতএব, রাহুলের প্রচার ভিন্ন সুরে বাজলেও তার বাস্তব প্রতিফলন মাটিতে সীমিত।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, দলের একাংশের মধ্যেই রাহুলের কৌশল নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছে। এক প্রাক্তন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি সদস্য বলেন,
“এইভাবে নির্বাচন কমিশন ও গণতন্ত্রের সততা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলা শেষ পর্যন্ত ভারতীয় গণতন্ত্রকেই অবমাননা করছে।”
অন্য এক নেতা মন্তব্য করেছেন, “ডেটাসেটে সব সময়ই কিছু অস্বাভাবিকতা থাকে। কিন্তু রাহুল যা করছেন, তা গণতন্ত্রকেই ‘রিগিং’ করা বলে প্রমাণ করছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাহুলের এই একমুখী প্রচার কৌশল মহাগঠবন্ধনের ঐক্যে ফাটল ধরাচ্ছে এবং এনডিএ কে সুবিধা দিচ্ছে।
ভারতীয় স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ফোরামের অনুরাগ ঝুনঝুনওয়ালা এক্স-এ লেখেন, “রাহুল আসলে তাঁর সমর্থকদের প্রস্তুত করছেন ভবিষ্যতে ২০২৯ সালের ফলাফল অস্বীকার করার জন্য। তাঁর পরিবারের স্বৈরাচারী প্রবণতার ইতিহাস রয়েছে।”
এখনো স্পষ্ট নয় রাহুল গান্ধীর প্রতিশ্রুত “হাইড্রোজেন বোমা” আদৌ প্রকাশ পাবে কিনা। যদি আসে, সেটি কি সত্যিই বিজেপির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক প্রমাণ হবে, নাকি উল্টো কংগ্রেসকেই বিপাকে ফেলবে?
মহাগঠবন্ধনের ভেতরে ও বাইরে উভয় জায়গাতেই আশঙ্কা বাড়ছে, বিজেপি বা নির্বাচন কমিশনের বদলে রাহুলের “হাইড্রোজেন বোমা” কংগ্রেসের ওপরেই ফেটে যায় !