স্নিগ্ধা চৌধুরী
নবরাত্রির তৃতীয় দিনে পূজিত হন মহাশক্তির তৃতীয় রূপ দেবী চন্দ্রঘণ্টা। তিনি দেবী পার্বতী, তিনি দুর্গা, তিনিই বিশ্বজননী। শাস্ত্র মতে, শিবের সাথে বিবাহোত্তর গৃহপ্রবেশের সময় তাঁর কপালে উদ্ভাসিত হয়েছিল অর্ধচন্দ্রাকৃতি এক দিব্য ঘণ্টা। সেই ঘণ্টাধ্বনি থেকেই প্রসূত হয় তাঁর রূপের নাম চন্দ্রঘণ্টা। এই ঘণ্টা কেবল অলঙ্কার নয়, বরং মহাশক্তির এমন এক প্রতীক যা ভয় ও অশুভকে নিশ্চিহ্ন করে, আর ভক্তকুলকে আশ্রয় ও আশ্বাস প্রদান করে।
পুরাণে বলা হয়েছে, যখন অসুরসেনারা তিনলোক অধিকার করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন দেবী চন্দ্রঘণ্টা সিংহবাহিনীতে আরোহণ করে দশভুজা রূপে প্রকাশিত হন। তাঁর হাতে ছিল ত্রিশূল, খড়্গ, ধনুক, কমণ্ডলু সহ দশ প্রকার অস্ত্র। সোনালি দীপ্তিতে জ্বলজ্বল করা তাঁর রূপ অসুরদের হৃদয়ে সঞ্চারিত করেছিল ভয়, আর ভক্তদের অন্তরে সৃষ্টি করেছিল সাহস। তাঁর ঘণ্টার নিনাদে আকাশ, বাতাস, ধরণী এবং পাতাল কেঁপে উঠেছিল। এই ধ্বনি অশুভ শক্তিকে তাড়িয়ে দিয়েছিল দূর দিগন্তে।
কাশীর চন্দুনাউ অঞ্চলের এক ছোট্ট মন্দিরে বিশেষভাবে পূজিত হন দেবী চন্দ্রঘণ্টা। সেখানে দেবীর মূর্তি মাত্র হাতখানেক লম্বা, অথচ সেই ক্ষুদ্র মূর্তির সামনে প্রতিবার নবরাত্রির তৃতীয় দিনে সমবেত হয় অসংখ্য ভক্ত। দেবীর পাশে রাখা থাকে এক বিশাল ঘণ্টা, সেটি যেন প্রতীক হয়ে ওঠে দেবীর নিত্যনিনাদের। দেবীকে ঘিরে থাকে নবদুর্গার অন্য আটটি রূপ, যেন মাতৃশক্তির পূর্ণ মহিমায় ভক্তদের কাছে ধরা দেন তিনি। কথিত আছে, এই দিনে দেবী ভক্ত হৃদয়কে প্রবেশ করান মণিপুর চক্রে, যেখানে উদ্ভাসিত হয় দিব্যদর্শন ও আধ্যাত্মিক শক্তি।
চন্দ্রঘণ্টার পূজায় ভক্তের অন্তর পবিত্র হয়, দূর হয় পাপ ও ভয়। শাস্ত্রকথায় আছে, তাঁর আরাধনায় মহাপাপীও মুক্তি লাভ করে। মৃত্যুর ভয়কে যিনি ভয় পান, যমঘণ্টার ধ্বনি যাঁর অন্তরে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, চন্দ্রঘণ্টার আশীর্বাদে তিনি মুক্তি পান সেই ভয় থেকে। ঘণ্টার মধুর নিনাদ ভক্তকে রক্ষা করে সর্বপ্রকার অশুভ শক্তির হাত থেকে। দেবীর বাহন সিংহ ভক্তকে শক্তি, পরাক্রম ও সাহসের প্রতীক হিসেবে জীবনভর সঙ্গ দেয়।
শারদীয়া ও বাসন্তী উভয় নবরাত্রিতেই এই তৃতীয় দিনে দেবী চন্দ্রঘণ্টার আরাধনা অপরিহার্য। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই দিনে দেবীর পূজা জীবনের সমস্ত অন্ধকার দূর করে আনে আলোর দিশা। যিনি চন্দ্রঘণ্টার পূজা করেন, তাঁর জীবনে কষ্টের অবসান ঘটে, মেলে সত্য, শান্তি ও কল্যাণের পথ।