অভিনেতা-রাজনীতিক বিজয়ের দল তামিলাগা ভেট্রি কাজাগম (টিভিকে) কারুরে পদপিষ্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাসক দল ডিএমকে-র বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে। তারা এই ঘটনার পিছনে শাসকদলের চক্রান্ত রয়েছে বলে দাবি করেছে। শনিবারের নির্বাচনী সমাবেশে পদপিষ্টের ঘটনায় অন্তত ৩৯ জনের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ১০০ জন আহত হন।
টিভিকে-র আইনজীবী অরিভাঝাগন জানিয়েছেন, তারা মাদ্রাজ হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে আদালতের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় আদালতের তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হোক, অথবা তদন্তের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হোক কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই-এর হাতে।
অরিভাঝাগন রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘিত হওয়ার দাবিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “এই ঘটনায় প্রশাসনের ব্যর্থতাকে আড়াল করতেই দোষ চাপানো হচ্ছে টিভিকে-র ওপর। বাস্তবে এর পেছনে গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে।”
প্রধান বিরোধী দল এআইএডিএমকে-র সাধারণ সম্পাদক ও বিরোধী নেতা এডাপ্পাডি কে পলানিস্বামীও এই দুর্ঘটনার জন্য সরকার ও পুলিশের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, “আমাদের জানানো হয়েছিল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার কারণে হুড়োহুড়ি শুরু হয়েছিল, যার কারণে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। অতীতে চার জেলায় একই ধরনের প্রচারসভা হয়েছে, অথচ পুলিশ যথাযথ নিরাপত্তা দেয়নি। ডিএমকে-র সভায় হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকে, কিন্তু বিরোধী দলের সভায় সেই নিরাপত্তা থাকে না। এটি স্পষ্ট পক্ষপাতিত্ব।”
পলানিস্বামী আরও বলেন, “যদি পুরো নিরাপত্তা দেওয়া হত, এত প্রাণহানি ঘটত না। রাজনৈতিক দলের নেতারও দায়িত্ব থাকে সভাস্থলে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। তা করা হয়নি। সরকার ও পুলিশ সঠিকভাবে কাজ করলে এত জীবনহানি এড়ানো যেত।”
এদিকে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি টিভিকে প্রধান বিজয় শোকপ্রকাশ করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি লিখেছেন, “আমাদের প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, তাদের মুখগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে বারবার। এই ক্ষতি আমাদের জন্য অপূরণীয়। কোনও সান্ত্বনা প্রিয়জনের অভাব পূরণ করতে পারে না। তবুও পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আমি প্রতিটি মৃতের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা এবং আহত ও চিকিৎসাধীনদের ২ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
বিজয় তাঁর বার্তার শেষে বলেন, “সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমরা যেন এ শোক থেকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াতে পারি।”
প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে এবং আহতদের ৫০,০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন ইতিমধ্যেই ঘটনাটিকে অভূতপূর্ব দুর্ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন এবং মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি, হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের কথাও ঘোষণা করেন তিনি।
কারুরের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন তামিলনাড়ুর রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র তরঙ্গ উঠেছে।