
শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত টানা ভারী বৃষ্টি। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ডুয়ার্সের চা বাগানগুলি। ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি ব্লকের মধ্যে রয়েছে জলপাইগুড়ির বানারহাট ও নাগরাকাটা এবং আলিপুরদুয়ারের কালচিনি। বানারহাট ও নাগরাকাটা গত ১২ ঘন্টায় ৩৫০ মিমি করে বৃষ্টিপাত হয়েছে, যেখানে কালচিনিতে তুলনামূলকভাবে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়াও, ভুটানের ছাড়া জলে কমবেশি ৩০টি চা বাগান প্লাবিত হয়েছে।ভারী বৃষ্টি এবং প্লাবনের জেরে মেচপাড়া, রিয়াবাড়ি, নাগরাকাটা, মোরাঘাট, লক্ষ্মীপাড়া, সুভাষিণী এবং সাতালির মতো বাগানগুলিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চা বাগানগুলির রাস্তা যেমন ভেঙেছে তেমনি ভেঙেছে অনেক কালভার্টও ।
নাগরাকাটা চা বাগানে, কুর্তি নদীর উপর একটি ফুটওভার ব্রিজ ভেসে গেছে। বন্যার জলে হিলা এবং একটি এসএসবি ক্যাম্পের সংযোগকারী প্রধান সেতুটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার ডুয়ার্স-তরাই শাখার সম্পাদক সুমিত ঘোষ আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এসএসবি ক্যাম্পের সংযোগকারী সেতুটিও যে কোন সময়ে ভেঙে পড়তে পারে। আর সেই সেতুটি ভেঙে পড়লে কমপক্ষে ৮০০০ মানুষ সেখানে জলবন্দি হয়ে পড়বেন। জানিয়েছেনযেসব বাগান সম্পূর্ণরূপে প্লাবিত হয়েছে, সেখানে জল নেমে যাওয়ার পর চা গাছগুলি বাঁচাতে অন্তত ১ সপ্তাহের জন্য বিশেষ ট্রিটমেন্ট চালু করতে হবে এবং তার জন্য পর্যাপ্ত সূর্যালোকেরও প্রয়োজন হবে।এদিকে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে আগামী ২৪ ঘন্টায় আবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ফলে চা বাগানগুলির ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়ার আশঙ্কা।
ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার চেয়ারম্যান রাজকুমার মণ্ডলের বক্তব্য, বাগানগুলিতে জল যত বেশি সময় ধরে থাকবে, তত বেশি পলি জমা হবে মাটিতে। তিনি জানান, ভুটান থেকে আসা জলে থাকে ডলোমাইট, যা চা বাগানের মাটিকে রীতিমতো অনুর্বর করে তোলে। অতীতে এমন প্লাবনের কারণে কালচিনির মেচপাড়া চা বাগানের অনেক একর জমি ডলোমাইট পলি জমার কারণে অনুর্বর হয়েছিল।কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (সিআইএসটিএ) সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে ডুয়ার্স এবং তরাইয়ের ছোট-বড় চা বাগানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বানেরহাট, নাগরাকাটা, মাল, ময়নাগুড়ি এবং সদর ব্লকের বেশিরভাগ বড়-বড় চা বাগান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের লাইন এবং ঘরবাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্লাবিত হওয়ার কারণে ছোট চা বাগানগুলিতে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক অনুপস্থিত ছিলেন। রবিবার রাতে ভারী বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ততরাই এলাকার ৪৫টি চা বাগান।