
সুপ্রিম কোর্টে সোমবার ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর ঘটনার কঠোর নিন্দা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি জানিয়েছেন, দেশের প্রধান বিচারপতি বি.আর.গাভাই-এর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছেন এবং তাঁকে বলেছেন, “এই ধরনের নিন্দনীয় কাজের কোনও স্থান নেই সভ্য সমাজে।”
সোমবার বিকেলে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, “আজ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভারতের প্রধান বিচারপতির উপর যে হামলার চেষ্টা হয়েছে, তা প্রত্যেক ভারতীয়কে ক্ষুব্ধ করেছে। সমাজে এই ধরনের ঘৃণ্য আচরণের কোনও স্থান নেই। এটি সম্পূর্ণরূপে নিন্দনীয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি বিচারপতি গাভাই-এর সঙ্গে কথা বলেছি এবং এমন পরিস্থিতিতেও তাঁর যে স্থিরতা ও সংযম দেখা গেছে, তা প্রশংসনীয়। এটি তাঁর ন্যায়বিচারের মূল্যবোধ ও সংবিধানের চেতনার প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতিফলন।”

ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও। কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী এক বিবৃতিতে বলেন, “ভারতের প্রধান বিচারপতির উপর সুপ্রিম কোর্টের ভিতরে যে আক্রমণের চেষ্টা হয়েছে, তার নিন্দা করার মতো ভাষা নেই। এটি কেবল তাঁর ওপর আঘাত নয়, আমাদের সংবিধানের মর্যাদার ওপরও আক্রমণ। বিচারপতি গাভাই অত্যন্ত সংযম ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছেন। দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর পাশে দাঁড়াতে হবে ব্যথা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদের সঙ্গে।” তিনি আরও বলেন, এই ঘটনা ভারতের গণতন্ত্রে শালীনতা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধার উপর প্রশ্ন তুলেছে।
লোকসভার বিরোধী দলনেতা ও কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী এক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, “ভারতের প্রধান বিচারপতির উপর এই আক্রমণ দেশের বিচারব্যবস্থার মর্যাদা এবং সংবিধানের চেতনার ওপর আঘাত। ঘৃণা ও বিদ্বেষের এমন প্রকাশ আমাদের সমাজে কোনও স্থান পেতে পারে না। এই ঘটনার কঠোর নিন্দা করা উচিত।”
সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ প্রধান বিচারপতি বি.আর.গাভাই-এর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে মামলা উল্লেখের সময় আদালতের ভেতরেই ৭১ বছর বয়সি আইনজীবী রাকেশ কিশোর জুতো খুলে বিচারপতির দিকে ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করেন। সঙ্গে চিৎকার করে বলেন “সনাতন ধর্মের অপমান সহ্য করা হবে না”।নিরাপত্তা কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আটক করেন। ঘটনায় আদালতের ভিতরে উপস্থিত আইনজীবী ও কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিচারপতি গাভাই সবাইকে শান্ত হতে বলেন এবং আদালতের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। নিরাপত্তা কর্মীদেরও তিনি ওই আইনজীবির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিতে নিষেধ করেন।
তবে ঘটনার পরই বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া জরুরি বৈঠক করে অভিযুক্ত আইনজীবী রাকেশ কিশোরকে সাসপেন্ড করেছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। বিবৃতিতে কাউন্সিল জানায়, “একজন আইনজীবীর কাছ থেকে এই ধরনের আচরণ সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং আদালতের শৃঙ্খলার পরিপন্থী। আইন পেশার মর্যাদা রক্ষার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
এই ঘটনার পর আইনজীবী মহল ও রাজনৈতিক পরিসরে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর। আইনজীবী সংগঠনগুলো বলছে, বিচারব্যবস্থা এবং সংবিধান উভয়ের মর্যাদা রক্ষায় সমাজের প্রতিটি নাগরিকের দায় রয়েছে।