
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিনেই আলোর উৎসবের তোড়জোড়। নৈহাটিতে শুরু হয়ে গেল শ্যামা মায়ের আরাধনার প্রস্তুতি। সোমবার বিখ্যাত বড়মার মন্দিরে দেবীর কাঠামো পুজো হল মহা ধুমধামে। মন্দির চত্বরে ভিড় জমান অগণিত ভক্ত। ছিল ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কড়া নিরাপত্তা। হাজির ছিলেন স্বয়ং পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা। ছিলেন নৈহাটির সাংসদ পার্থ ভৌমিক, বিধায়ক সনৎ দে। প্রতি বছর এই দিন বড়মার কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়েই নৈহাটি জুড়ে কালীপুজোর দামামা বেজে ওঠে।
দুর্গাপুজোয় যদি হয় কলকাতা, তবে কালীপুজোয় সেই স্থান উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি ও বারাসতের। প্রতিমার উচ্চতা, মণ্ডপসজ্জা থেকে থিম, আলো, সবেতেই একে অপরকে টেক্কা দেয়। তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায় বহুদিন আগে থেকে। এবারও তাই। নৈহাটির বড়মার মন্দিরে হয়ে গেল দেবীর কাঠামো পুজো। কষ্টিপাথরের বড়মাকে দর্শন করার পাশাপাশি বহু ভক্ত অংশ নেন কাঠামো পুজোয়। কালীপুজোয় ২২ ফুট উচ্চতার ঘন কালো কৃষ্ণবর্ণের বড়মাকে দেখতে যে ভিড় উপচে পড়বে, তা মালুম হল এদিনই।
ভক্তদের ভিড়ের কথা মাথায় রেখে এ বছর কালীপুজোর ৭ দিন আগে থেকেই পুজো গ্রহণ করা হবে। এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বড়কালী পুজো সমিতি। সোমবার ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা কালীপুজোর আয়োজন নিয়ে বৈঠক করেন। অন্য বছরের মতো এবারও নৈহাটির শিল্পী শুভেন্দু সরকার প্রতিমা তৈরি করছেন। কালীপুজোর দিন ‘বড়মা’কে সোনা ও রুপোর গয়না দিয়ে সাজানো হবে।
পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা বলেন, “গত বছরের পরিকল্পনা থেকে আরও উন্নতি করে সঞ্চালন পরিকল্পনা করা হচ্ছে যাতে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা না ঘটে। ভিআইপি ও সাধারণ মানুষ যাতে একসঙ্গে বড়মার দর্শন করতে পারে সেই ব্যবস্থা থাকছে। নজরদারির জন্য সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি ড্রোন থাকবে। রেল পুলিশ, পি ডব্লিউ ডি, বিদ্যুৎ দফতর সকলকে একসঙ্গে নিয়ে বৈঠক হবে। দণ্ডি কাটার ব্যবস্থা নিয়েও এদিন আলোচনা হয়েছে।”
সাংসদ পার্থ ভৌমিক জানিয়েছেন, “গোটা দেশে বড়মার আবেগ ছড়িয়ে। লক্ষ লক্ষ ভক্ত কালিপুজোয় বড়মাকে পুজো দিতে আসেন। সকলেই যাতে সুষ্ঠুভাবে পুজা দিয়ে দর্শন করতে পারে, এ নিয়েই এদিন বৈঠক হয়।”
নৈহাটি বড়কালী পুজো সমিতির সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য জানান, বড়মার কাঠামো পুজো মানেই আমাদের কাছে পুজো শুরু। ২০ অক্টোবর কালিপুজো। তার আগে ১৩ তারিখ থেকে পুজো নেওয়ার জন্য কাউন্টার খুলে যাবে। ১৯ তারিখ ২৪ ঘন্টা কাউন্টার খোলা থাকবে। পুজোয় ভিড় সামাল দিতেই এই উদ্যোগ।”
ঐতিহ্যবাহী নৈহাটির বড়মার কালীপুজো আজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও সমানভাবে পূজিত। বড়মাকে নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা আলাদা আবেগ আছে। প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। তাই নিরাপত্তাও জোরদার করতে হয়। সে ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে ব্যারাকপুর কমিশনারেট। এদিন পুলিশ কমিশনার, সাংসদ, বিধায়ক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডিসি নর্থ গণেশ বিশ্বাস, ডিসি ট্রাফিক অম্লান কুসুম ঘোষ ও পুলিশের শীর্ষ কর্তারা।
পুরপ্রধান বলেন, এবারে নৈহাটির ঐতিহ্যবাহী বড়মার পুজো ১০২ বছরে পদার্পণ করল। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভক্তির জায়গা এই বড়মা। তাই আস্থা ও ভরসায় বিশ্বাস করেই দেশ বিদেশের বহু ভক্ত উপস্থিত হন বড়মার দর্শনে। এ বছরও তার অন্যথা হবে না।
আগামী ১৫ দিন চোখের নিমেষে কেটে যাবে, বলছিলেন আয়োজকরা।
নৈহাটির বিধায়ক সনৎ দে বলছিলেন, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত এখানে আসেন। দেশ-বিদেশ থেকেও আসেন অনেকে। মানত করেন যাঁরা, তাঁরা পুজোর দিন মধ্যরাত থেকেই গঙ্গায় স্নান করে দণ্ডি কাটেন।
যেহেতু এই পুজো নৈহাটি রেল স্টেশনের একেবারে সামনে, ফলে রাজ্য পুলিশ ও রেল পুলিশ যৌথভাবে মানুষের নিরাপত্তার দিকটি দেখবেন। ড্রোনে নজরদারি চালানো হবে। জানিয়েছেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার মুরলিধর শর্মা।
