বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের লন্ডন সফরের সময় তাঁর নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা এবং হামলার চেষ্টার ঘটনায় তীব্রভাবে নিন্দা জানাল ভারত। বুধবার হামলার মুখে পড়েন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।একটি আলোচনা শেষে লন্ডনের চাথাম হাউস থেকে বের হওয়ার সময় এক ব্যক্তি তার গাড়ির দিকে দৌড়ে যায় এবং পুলিশ অফিসারদের সামনে ভারতের জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলে।একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী অনলাইনে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওয় দেখা গেছে তাতে দেখা যায় একজন ব্যক্তি আক্রমণাত্মকভাবে মন্ত্রীর কনভয়ের দিকে দৌড়াচ্ছে। প্রতিবাদকারীকে ত্রিবর্ণ পতাকা ছিঁড়তে দেখা যায়।অন্যদের সেখানে খালিস্তানি স্লোগান দিতে দেখা যাচ্ছিল।তবে কিছুক্ষণ পরই পুলিশ এগিয়ে এসে তাকে এবং অন্যান্য উগ্রপন্থীদের গ্রেফতার করে। জয়শঙ্কর যে ভেন্যুতে আলোচনায় অংশ নিচ্ছিলেন, তার বাইরেও খালিস্তানি উগ্রপন্থীরা প্রতিবাদ দেখাচ্ছিলেন। সেইসময় তাদের পতাকা ওড়াতে এবং খালিস্তান স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এই ঘটনায় জয়শঙ্করের মতো ভিভিআইপির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক গাফিলতির ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।এই মুহূর্তে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ৪ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সরকারি সফরে রয়েছেন।বুধবার লন্ডনের চাথাম হাউস -এর বাইরে প্রো-খালিস্তান বিক্ষোভকারীদের একটি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।সেখানেই ভারতের বিদেশমন্ত্রী আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। মন্ত্রী ভিতরে আলোচনায় অংশ নেওয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা পতাকা এবং লাউডস্পিকার নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিল।
ভারতের বিদেশমন্ত্রক একটি বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা বিদেশমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য সফরের সময় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। আমরা এই ছোট দলটির বিচ্ছিন্নতাবাদী ও উগ্রপন্থীদের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা করি। আমরা এই ধরনের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার অপব্যবহারের নিন্দা করি। আমরা আশা করি যে এই ধরনের ক্ষেত্রে আয়োজক সরকার তাদের কূটনৈতিক দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে পালন করবে।”
তবে বিক্ষোভ সত্ত্বেও এস জয়শঙ্কর তার কূটনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যান এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, বিদেশ সচিব ডেভিড ল্যামি এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব ইভেট কুপারের সঙ্গে এক বৈঠকে জয়শঙ্কর মানবিক বিনিময় এবং পাচার ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে যৌথ প্রচেষ্টা সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন।সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এ জয়শঙ্কর লেখেন, “আজ লন্ডনে স্বরাষ্ট্র সচিব @YvetteCooperMP-এর সঙ্গে একটি ভালো বৈঠক হয়েছে।… ।”
তবে এটাই প্রথমবার নয় যে লন্ডনে খালিস্তানি গোষ্ঠীগুলি বিক্ষোভ আন্দোলন করছে। তথ্য বলছে ২০২৩ সালের এই মার্চ মাসেই লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনে হামলা চালিয়েছিল খলিস্তানিরা। পঞ্জাবে খলিস্তানি নেতা অমৃতপাল সিংয়ের গ্রেফতারির প্রতিবাদে সেই হামলা চালানো হয়েছিল। সেই ঘটনায় ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএ-র হাতে ধরা পড়েছিল এক অভিযুক্ত। এবছরের জানুয়ারিতে, প্রো-খালিস্তান উগ্রপন্থীরা ভারতীয় হাই কমিশনের বাইরে একটি বিক্ষোভ করেছিল। খালিস্তানি গোষ্ঠীগুলি লন্ডনের হ্যারোতে একটি সিনেমা হলে আক্রমণ করে এবং কঙ্গনা রানাউত অভিনীত চলচ্চিত্র ‘ইমার্জেন্সি’র স্ক্রিনিং বন্ধ করার চেষ্টা করে। এবারের ঘটনার পর বিভিন্ন ঘটনার কথা উল্লেখ করে, বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল যুক্তরাজ্যে ‘ভারত-বিরোধী’ হিংসা বিক্ষোভ ও ভীতি প্রদর্শনের বিষয়ে ভারতের উদ্বেগ তুলে ধরেছেন। আমরা আশা করছি সে দেশের সরকার তাদের কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করবে।
Leave a comment
Leave a comment