তামিল সিনেমার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা বিজয় অবশেষে তার বহু প্রতীক্ষিত রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করলেন। নিজের দল তামিলাগা ভেট্ট্রি কাজাগাম (TVK) গঠনের মধ্য দিয়ে তিনি সরাসরি ২০২৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদ হওয়ার এই যাত্রায়, তার লক্ষ্য একদম পরিষ্কার—ডিএমকে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, বিজেপি তার আদর্শিক প্রতিপক্ষ।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, বিজয় কি সত্যিই এই নির্বাচনে কোনো বড় উলটফের ঘটাতে পারবেন? তিনি কি সিনেমার বিশাল ফ্যানবেসকে রাজনৈতিক সমর্থনে রূপান্তর করতে পারবেন? তার দল কি সত্যিই তামিলনাড়ুর ক্ষমতার সমীকরণ বদলে দিতে পারবে?
বিজয় তার রাজনৈতিক আদর্শকে দ্রাবিড় গর্ব, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং দুর্নীতি বিরোধী লড়াই হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ডিএমকে এবং এডিএমকে—তামিলনাড়ুর দুই প্রধান দল, যারা বছরের পর বছর রাজ্য শাসন করে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন। ডিএমকে-কে সরাসরি তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ঘোষণা করে বিজয় বলেন, “তামিলনাড়ুর জনগণ দুর্নীতি, রাজবংশতন্ত্র এবং স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে পরিবর্তন চায়। আমি সেই পরিবর্তনেরই প্রতীক।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি বিজয় সত্যিই রাজ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চান, তাহলে তাকে এডিএমকের সাথে জোট গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। তবে, এডিএমকে-র সাধারণ সম্পাদক এডাপ্পাদি কে পালানিস্বামীর (EPS) নেতৃত্ব মেনে নিয়ে কাজ করতে তিনি কতটা প্রস্তুত? নাকি তিনি একক শক্তি হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান?
রাজনীতিতে নতুন হলেও, বিজয় যে বেশ চতুর তা বোঝা যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, “আমি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিচ্ছি। আমি তামিল জনগণের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত নেব।” তার বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি কোনো সম্ভাবনা বন্ধ করেননি, আবার সরাসরি কিছু বলেনওনি।
তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে চলচ্চিত্র তারকাদের প্রবেশ নতুন কিছু নয়। এমজিআর এবং জয়ললিতার মতো সফল নেতা যেমন ছিলেন, তেমনই ব্যর্থতার মুখ দেখেছেন শিবাজি গণেশন, বিজয়কান্ত এবং কমল হাসান।
কমল হাসানের দল মক্কল নিধি মায়্যাম (MNM) বেশ কয়েকটি নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোট শতাংশ ৫%-এর বেশি হয়নি। অন্যদিকে, রজনীকান্ত ২০২১ সালে শেষ মুহূর্তে রাজনীতি থেকে পিছু হটে যান। তাহলে বিজয় কি তাদের মতো ব্যর্থ হবেন, নাকি তিনি তামিল রাজনীতির নতুন চমক হয়ে উঠবেন?
বিজয়ের অন্যতম শক্তি হলো তার বিশাল ফ্যানবেস। কিন্তু ফ্যান হওয়া আর ভোটার হওয়া এক নয়—এটা তামিলনাড়ুর ইতিহাসই প্রমাণ করেছে। তার দল TVK যদি সত্যিই শক্তিশালী হতে চায়, তাহলে সিনেমার ভক্তদের প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মীতে রূপান্তরিত করতে হবে। ডিএমকে ও এডিএমকের মতো ভোটকেন্দ্রভিত্তিক সংগঠন গড়ে না তুললে, শুধুমাত্র জনপ্রিয়তা দিয়ে লড়াই জেতা কঠিন হবে।
তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে এখন এক নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিনের নেতৃত্বে ডিএমকে এখনো শক্ত অবস্থানে। বিজেপিও তাদের তামিলনাড়ু মিশন চালিয়ে যাচ্ছে। বিজয় কি ১৯৬৭ এবং ১৯৭৭ সালের মতো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবেন? নাকি শেষ পর্যন্ত তিনিও তার পূর্বসূরিদের মতো ব্যর্থতার তালিকায় যুক্ত হবেন? উত্তর পেতে হলে ২০২৬ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, তামিলনাড়ুর রাজনীতির মঞ্চে বিজয় এখনই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।