ভারতীয় স্থলসেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী মনে করেন, পাকিস্তান ও চিনের মধ্যে গভীর সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, এটি এমন একটি বাস্তবতা,যা আর অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়।
তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এই দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা ভারতের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি সতর্ক করেছেন যে, দুই দিক থেকেই ভারতের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করেছেন, চিন-পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ভারতের জন্য নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।
জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের হার গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলে দাবি করেছেন স্থলসেনাপ্রধান। তাঁর মতে, তরুণদের জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগদানের প্রবণতা কমেছে, যা ভারতীয় সেনাবাহিনীর সফল অভিযানগুলোরই ফল। সন্ত্রাস কমার পাশাপাশি পর্যটনও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কাশ্মীরের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক বলে তিনি মনে করেন।
চিন ও পাকিস্তানের মধ্যকার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা প্রসঙ্গে উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, এই দুই দেশ কৌশলগত দিক থেকে একে অপরের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। বিশেষ করে ভার্চুয়াল মাধ্যমে তাঁদের পারস্পরিক বোঝাপড়া প্রায় নিখুঁতভাবে চলে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বড় অংশই আসে চিন থেকে, যা তাদের সামরিক শক্তি বাড়িয়ে তুলছে। এর ফলে, ভারতের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে এবং সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা আরও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তৈরি হচ্ছে।
কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান থেকে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি, তবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কড়া নজরদারি ও ধারাবাহিক অভিযানের ফলে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। স্থলসেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে জঙ্গি হামলার সংখ্যা হ্রাস পেলেও অনুপ্রবেশের প্রবণতা একেবারে থেমে যায়নি। তাঁর আশঙ্কা, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে কাশ্মীর উপত্যকার স্থিতিশীলতা আবারও বিঘ্নিত হতে পারে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৮ সালের পর থেকে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা মূলত ভারতীয় সেনাবাহিনীর কঠোর নজরদারি,সফল অভিযানের কৌশল এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির ফল। সেনার লাগাতার তৎপরতা ও দৃঢ় প্রতিরোধের কারণে জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে, যা স্থিতিশীলতার দিক থেকে বড় সাফল্য।
উপেন্দ্র দ্বিবেদী আরও জানিয়েছেন, গত বছরে কাশ্মীরে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে ৬০ শতাংশই পাকিস্তানের নাগরিক ছিল। এটি স্পষ্ট করে যে প্রতিবেশী দেশটি এখনো সন্ত্রাসবাদকে মদত দিচ্ছে, যা ভারতের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। তাঁর মতে, পাকিস্তান নিজেদের কট্টরপন্থার কারণে গভীর সংকটে পড়ছে এবং এটি তাদের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকেও নষ্ট করছে। ভারত চায় প্রতিবেশী দেশ স্থিতিশীল থাকুক, তবে যদি পাকিস্তান জঙ্গিদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়, তাহলে এর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতেই হবে।
Leave a comment
Leave a comment