সূর্যের আলো পৌঁছালেও শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি মালদহের গাজোল ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত মালপাড়া ও মাহালিপাড়া গ্রামে। এখানকার বাসিন্দারা জানান, দুই গ্রামে এখনও পর্যন্ত কেউ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেননি। প্রায় ২০০টি পরিবারের মধ্যে দেড়শোর বেশি পরিবার কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে। ফলে গ্রামে শুধু বয়স্ক মানুষ ও ছোট ছেলেমেয়েরা রয়ে গেছেন, যাঁদের পড়াশোনার প্রতি কোনও উৎসাহ নেই।
গ্রামের বাসিন্দা সীমান্ত মার্ডি বলেন, “আমরা এখানে কাজ পাই না, তাই পেটের তাগিদে ভিনরাজ্যে যেতে হয়। অনেকেই সন্তানদের নিয়েই চলে যান। যাঁরা গ্রামে রেখে যান, তাঁদের পড়াশোনার জন্য কোনও চাপ দেওয়া হয় না।” অন্য এক বাসিন্দার কথায়, “শিক্ষকরা পড়াশোনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেই শিশুরা পরদিন থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। কেউ কেউ মিড ডে মিলের জন্য স্কুলে গেলেও পড়াশোনা করে না।” ফলে বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে প্রাথমিকের গণ্ডিও পেরোতে পারেনি।
এই সমস্যা নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান উর্মিলা রাজবংশী বলেন, “আমরা বহু চেষ্টা করেছি, শিক্ষার শিবিরও করেছি, কিন্তু কাজের অভাবের কারণে মানুষ ভিনরাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই বলেন, পড়াশোনা করে কী হবে, চাকরি তো হবে না।” অন্যদিকে, গাজোল ব্লকের বিডিও সুদীপ্ত বিশ্বাস আশ্বাস দিয়েছেন, “এটি সত্যি কিনা, তা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজনৈতিক মহলেও এই ইস্যু নিয়ে তর্ক শুরু হয়েছে। বিজেপি পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতা মোজাম্মেল হোসেন প্রশ্ন তোলেন, “বিধায়ক ও সাংসদ বিজেপির, তাঁরা কী করছেন?” অন্যদিকে, বিজেপির দাবি, “সরকারি প্রকল্প সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না বলেই মানুষ গ্রামে থাকতে পারছেন না।” প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও এই দুই গ্রামে শিক্ষার অভাবে কীভাবে অন্ধকার ঘোচানো যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।