পশ্চিম তীরের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ১০ জন ভারতীয় নির্মাণ শ্রমিককে মুক্ত করেছে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী। অভিযোগ উঠেছে, তাদের পাসপোর্ট কৌশলে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং জোর করে সেখানে আটকে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ এক মাস ধরে তারা নিখোঁজ থাকার পর, বিশেষ অভিযানে তাদের মুক্ত করা হয়।
প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, এই শ্রমিকরা নির্মাণ শিল্পে কাজের জন্য ইজরায়েলে এসেছিলেন এবং তাদের আল-জায়েম গ্রামে কাজে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পরই তারা এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যান। কেন এবং কীভাবে তাদের আটক করে রাখা হয়েছিল, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইজরায়েলি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সেনাবাহিনী চেকপয়েন্টে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করলে ভারতীয় শ্রমিকদের অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। অনুসন্ধানের পর জানা যায়, তাদের পাসপোর্ট ব্যবহার করে কিছু প্যালেস্টিনীয় ব্যক্তি অবৈধভাবে ইজরায়েলে প্রবেশ করছিলেন। এই খবর পাওয়ার পর, ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF), বিচার বিভাগ এবং অভিবাসন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে মধ্যরাতে অভিযান চালায়। অভিযানের ফলেই ওই শ্রমিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হয় এবং তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আপাতত তাদের কর্মসংস্থান এবং ভবিষ্যৎ কাজের অনুমতি বিষয়ক সিদ্ধান্ত বিচারাধীন।
ইজরায়েলে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে যে বিষয়টি গভীর তদন্তের অধীনে রয়েছে। একই সঙ্গে, উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং তাদের শারীরিক সুস্থতা পর্যবেক্ষণ করতে ইজরায়েলি প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখা হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাসের আকস্মিক হামলার পর থেকেই প্যালেস্টিনীয় নির্মাণ শ্রমিকদের ইজরায়েলে প্রবেশের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর ফলে দেশটিতে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত থেকে নির্মাণ খাতে কর্মসংস্থানের জন্য প্রায় ১৬ হাজার শ্রমিক ইজরায়েলে যান।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এই উদ্ধার অভিযান আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, কারণ পুরো মধ্যপ্রাচ্য এখন এক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। হামাসের সশস্ত্র হামলায় ইজরায়েলে হাজারো মানুষ প্রাণ হারান, অপহৃত হন অনেকেই। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইজরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান চালায়। লেবানন থেকেও ইজরায়েলের ওপর হামলা চালানো হয়, যেখানে হিজবুল্লার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।
গাজা যুদ্ধের কারণে ইজরায়েলের আক্রমণে প্রায় ৫৩ হাজার প্যালেস্টিনীয় নিহত হয়েছেন, অন্যদিকে হামাসের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় দু’হাজার ইজরায়েলি নাগরিক। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ভারতীয় শ্রমিকদের উদ্ধারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
Leave a comment
Leave a comment