কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য ধানের এমএসপি ১১৭ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কুইন্টাল ২,৩০০ টাকা করেছে। সরকার ২০২৪-২৫ খরিফ বিপণন মরশুমের জন্য ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) ৫.৩৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি কুইন্টাল প্রতি ২,৩০০ টাকা করেছে। যাতে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো যায় তাদের হাতে দুটো পয়সা রোজগার করার সুযোগ করে দেওয়া যায়। সরকার উদ্বৃত্ত চালের মজুদ থাকা সত্ত্বেও ধানের সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি করেছে। দেশের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় মেয়াদে এটিই প্রথম মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পাশে রাজ্য সরকারও কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে ধান কেনা নিয়ে জোর উদ্যোগ নিয়েছে। যাতে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো যায়। আর তাই কুইন্টালে ২৩২০ টাকা দাম দিয়ে চাষীদের থেকে সরকার ধান কেনা শুরু করে সরকার। কুইন্টাল প্রতি ধানের দামও বেড়েছে। এখন চাষিরা কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম ২ হাজার ৩০০ টাকা পাবেন বলে জানা যায়।সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে (সিপিসি) ধান বিক্রি করলে আরও ২০ টাকা উৎসাহ-ভাতা দেওয়া হবে চাষীদের। অর্থাৎ চাষিরা পাবেন ২ হাজার ৩২০ টাকা। সিপিসি ছাড়াও সমবায় সমিতি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং ফারমার্স প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন থেকেও ধান কেনা হবে। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ইলেকট্রনিক ওজন পরিমাপ যন্ত্রের সঙ্গে ই-পস যন্ত্র যুক্ত থাকবে।
একজন কৃষক সারা বছরে মোট ৯০ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারবেন। ধান বিক্রির টাকা সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। ধান বিক্রির তিনদিনের মধ্যেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পেয়ে যাবেন কৃষকরা। কৃষকবন্ধু পোর্টালে নথিভুক্ত কৃষকরা সরসারি ধান বিক্রি করতে পারবেন। তাঁদের কিছু করার দরকার নেই। শুধু ধান কেনার পোর্টালে গিয়ে ডেট বুকিং করতে হবে। আর যারা এখনও কৃষকবন্ধু পোর্টালে নাম তোলেননি তাঁদের জমি সংক্রান্ত স্ব-ঘোষণাপত্র দিয়ে ধান বিক্রি করতে হবে।
তবে বাটা নিয়ে অনেক চাষির অভিযোগ রয়েছে। সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধানে বেশি পরিমাণে বাদ দেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন অনেকেই।
কিন্তু এতো গেলো সাদা চোখে সরকারিভাবে নিয়ম কানুন ধান বিক্রির। বর্তমানে মিলগুলো আর ধান কিনছে না একদম। সাদা চোখে মিলে স্টক নেই কারণ ধান রাখার আর জায়গা নেই। কিন্তু অন্য ভাবে দেখতে গেলে যা জানা যাচ্ছে সেটা হলো আগে মিলের মালিকরা আড়তদার এর কাছ থেকে ধান কিনে নিয়ে তারা সেই ক্রয় দেখাতো চাষীদের কাছ থেকে কিনেছে বলে। এতে মালিকরা কি সুবিধা পেত সেটা হলো একজন চাষী নব্বই কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারবেন। মালিকরা আড়তদার এর কাছে ধান কিনে নিয়ে কি করছে বিভিন্ন ভাবে তারা সেই নানা একাউন্ট খুলে বা ব্যাংক এর মাধ্যমে সেই সব ধান এর বিক্রির টাকা নিজেদের হাতে বা নিজেদের অ্যাকাউন্টে নিয়ে নিত। সরকার এটা ধরতে পেরে যাদের এই সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নব্বই কুইন্টাল এর বেশি ধান জমা হয়েছে সেই সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিলো। কিন্তু এরফলে মালিকরা তাদের টাকা পেলো না সরকার এর কাছ থেকে উল্টে তাদের এক কুইন্টাল ধান বিক্রি করলে ৬৮ কেজি চাল দিতে হয় সরকার এর ঘরে সেটাও দিতে হলো । তার মানে মিলের লোকদের দুদিক থেকে ক্ষতি হলো।
এইভাবে অনেক অর্থ আয় করতে পারত মিলের লোকজন নানা অসৎ উপায়ে। এই বিষয় গুলো জানাজানি হলো। তখন সরকার কড়াকড়ি করলো নজরদারি করলো মিলের উপর। আর তাতে চাপে পড়ে গেলো মিলের লোকজন। এক একটি মিলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়ে গেলো প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ কোটি টাকা। আর এতেই বহু মিল বন্ধ হয়ে গেলো বীরভূমের বিভিন্ন এলাকায়। যে সব মিলে খোলা আছে তারাও কম পরিমাণে ধান কিনতে পারছে যাতে তাদের লাইসেন্স ঠিক থাকে সেই আশায়। আর এই কারণে বীরভূম জেলা শুধু নয় অনেক জায়গায় আর ধান কেনা হচ্ছে না বর্তমানে।
চাষীরা যেখানে এক কুইন্টাল ধান বিক্রি করলে কিষান মান্ডিতে ২৩০০ টাকা পান। আর কুড়ি টাকা উৎসাহ ভাতা পান। মোট ২৩২০ টাকা।সেই টাকা তিন দিনের মধ্য চাষীদের কাছে একাউন্ট এ পৌঁছে যায়। কিন্তু এই সমস্যার কারণে বীরভূমে বহু মিল বন্ধ বর্তমানে। আর সেই কারণেই ধান কেনাও বন্ধ জেলার বিভিন্ন জায়গায়। বীরভূম জেলার পরিসংখ্যানে মোট সত্তর ভাগ চাষীর ধান কেনা হলেও জেলার মোট ত্রিশ ভাগ চাষীর ধান কেনা হয়নি এখনও। যে ধান এখন আড়ত দার এর মারফত বিক্রি করতে হবে চাষীদের। যে ধান বিক্রি করে ২৩২০ টাকা মিলতো চাষীর সেই ধান এখন মিডিল ম্যানকে ধরে দুহাজার টাকা বা তার কম দামে বিক্রি করতে হবে চাষীকে। আর এই মিডিলম্যানরা
চাষীদের নানা ভাবে ঠকায়। যেমন ধান নেবার সময় পাঁচ থেকে ছয় কেজি করে বাদ দিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে কম দাম দেওয়া। এটাই হলো আসল কথা।
আর সেই কারণেই বীরভূমের বিভিন্ন চালকল ও মান্ডি বন্ধ আছে বর্তমানে। তাহলে এই ত্রিশ ভাগ চাষী এখন কি করবেন। তাঁরা যাবেন কোথায়। তাঁদের ধান বিক্রী না করতে পারলে পরের ধান বসানোর জন্য বীজ, সার কিনতে পারবেন না আর তাই যে কোনো উপায়ে মিডিল ম্যান এর মাধ্যমে ঘরের ধানকে বিক্রি করতে হবে। তাহলেই কিছুটা হলেও টাকা পাবে চাষীরা। না হলে চলবে কি করে। কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় ক্ষেত্রেই সরকার চাধীদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা করলেও সঠিক পন্থা অবলম্বন করে এই ধান কেনার কথা ভাবলে তাহলে চাষীদের কিছুটা মুখে হাসি ফোটে। আর না হলে এই রাজনৈতিক অনুগ্রহে থাকা মিল মালিক, কিষান মান্ডিতে কৃষি দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে হেনস্থা হয়ে চাষীদের মুখ বুজে সব সহ্য করেই থাকতে হয়।
যে কোনোও ভাবে ক্ষতি স্বীকার করেও ধানকে বিক্রি করে দিতে হয় কম লাভ রেখে। সেই সব বিষয়ে সচেতন নয় কেন্দ্র ও রাজ্য কোনোও সরকার কী। আর তার সুযোগ নিয়ে একশ্রেনীর ফড়ে বা মধ্যস্বত্বভোগী লাভ করছে প্রশাসনকে সামনে রেখেই।আর চাষীরা সব দেখেও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন আর একশ্রেনীর মানুষ সেই চাষীদের সামনে রেখেই নিঃশব্দে রাজনীতি করে আর্থিক ফায়দা তুলে যায়। আর এই সব কিছু জেনেও কিছুই বলতে পারে না আমাদের কৃষককূল। যাঁদের জন্য আমরা সারা বছর ভাত খেতে পাই। অথচ তাঁদের নিয়ে রাজনীতিরও শেষ নেই। রাজনীতির শিকার হয়েও তাঁরা সবাই মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন। এ ছাড়া যে তাঁদের আর কোনো উপায় নেই। যাতে করে তাঁরা সবাই প্রতিবাদে মুখর হবেন এমন নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে। যে দুর্নীতির মায়াজালে আটকে পড়ে হাঁসফাঁস করেন আমাদের মাটির গন্ধ মাখা কৃষকরা। যাঁরা রোদে পুড়ে জলে ভিজে ফসল তৈরি করেন ঘাম রক্ত ঝরিয়ে।