মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডকে দখল করে নিক এমনটা কী সেখানকার বাসিন্দারা চায়? সদ্য হয়ে যাওয়া ভোটে এর বিরুদ্ধেই মত দিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের মানুষ। সদ্য অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছে গ্রিনল্যান্ডের ডোনাল্ড ট্রাম্প-বিরোধী মধ্য- ডানপন্থী দল ডেমোক্র্যাটস পার্টি। এ বারের নির্বাচনে মোট যে ছয়টি দলের প্রার্থীরা লড়ছেন, ঘটনাচক্রে তার মধ্যে চারটি দলই ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্রিনল্যান্ডের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে।
আসলে ডেনমার্কের তত্ত্বাবধানে স্বায়ত্ত্বশাসন ভোগ করে গ্রিনল্যান্ড। ডেনমার্কের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই চির তুষার ভূমি। ৫৬ হাজার জনসংখ্যার এই বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ প্রায় ৩০০ বছর ধরে কোপেনহাগেনের নিয়ন্ত্রণে। তবে সেখানে একটি স্বাধীন সরকার আছে। তবে বিদেশনীতি, সামরিক নীতি এবং অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে ডেনমার্ক। দীর্ঘদিন ধরেই গ্রিনল্যান্ডের এক অংশের মানুষ পূর্ণ স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের দাবি করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হয়েই কানাডার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডকে কিনতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প।এই বড় জল্পনা তৈরি হয় বিভিন্ন মহলে।তবে এবার সরাসরি গ্রিনল্যান্ড দখলের কথা না বলে বরং এই দ্বীপকে আমেরিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন যে তাঁর ধরণা এটা হবেই। কিন্তু ট্রাম্প কেন চাইছেন গ্রিনল্যান্ড? এর উত্তর লুকিয়ে আছে পৃথিবীর মানচিত্রে গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান এবং এর বুকে সঞ্চিত বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ। গ্রিনল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ তেল, খনিজ, সোনা, ইউরেনিয়াম এবং জিঙ্ক সঞ্চিত আছে। বৃহস্পতিবার আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো সচিব মার্ক রুটকে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের গ্রিনল্যান্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের ভাবনার কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘সারা বিশ্বের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার স্বার্থেই’ গ্রিনল্যান্ড নিয়ে তাঁর এই ভাবনা। কারণ তথ্য বলছে মেরু অঞ্চলে ক্রমশ প্রভাব বৃদ্ধি করছে চিন এবং রাশিয়া।গ্রিনল্যান্ডে ব্যাপকভাবে প্রবেশ করেছে বেইজিং। চিনা কোম্পানিগুলো সেখানে খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান, খনন ও প্রক্রিয়াকরণে সক্রিয়ভাবে জড়িত। আর্কটিক অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলার জায়গা থেকেই ট্রাম্পের দেশ নতুন করে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
অনেকের অভিযোগ আসলে নিরাপত্তার চেয়েও বড় বিষয় হল আমেরিকা এই খনিজ নিজেদের দখলে নিতে চায়। সে কারণেই গ্রিনল্যান্ড অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ট্রাম্প এতটা আগ্রহী। ১০ মার্চই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প জানান, তিনি গ্রিনল্যান্ডে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। তার পরেই আমেরিকার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন গ্রিনল্যান্ডের বাসিন্দাদের।
Leave a comment
Leave a comment