উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী রামমোহন গ্রন্থাগারের পরিবেশ নিয়ে এখন উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে গ্রন্থাগারের আশপাশের কিছু এলাকা বেআইনিভাবে দখল হয়ে রয়েছে, যা সাধারণ পথচারীদের চলাচলে বাধার সৃষ্টি করছে।
অস্থায়ী বসতি গড়ে ওঠায় পথচারীদের চলাচল কার্যত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত ফুটপাথ ও রাস্তার অংশ দখল হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
শুধু দখলদারির সমস্যাই নয়, স্থানীয়দের অভিযোগ, এই এলাকাকে ঘিরে বেআইনি মাদক ব্যবসা ও নেশার আড্ডা জমে উঠেছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মারের নিচে আগুন জ্বালিয়ে রান্নার কাজ চলছে, যা যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
কলকাতা পুরসভার ‘গ্রেড ওয়ান’ হেরিটেজ তালিকায় স্থান পাওয়া এই গ্রন্থাগার তার ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য বিশেষ পরিচিত। এর ভেতরে রয়েছে অমূল্য পাণ্ডুলিপি, দুর্লভ বই, ভিনাইল রেকর্ড, রেকর্ডিং ক্যাসেট এবং বহু ঐতিহাসিক দলিল, যা অতীতের মূল্যবান স্মারক হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়াও, এই স্থানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, জগদীশচন্দ্র বসুর মতো বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত রয়েছে, যা একে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
তবে, এমন এক ঐতিহ্যবাহী স্থানের চারপাশে বেআইনি দখলদারি এবং অসামাজিক কার্যকলাপের বৃদ্ধিতে স্থানীয় বাসিন্দারা ও গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগারের সুরক্ষায় প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই।
গ্রন্থাগারের কোষাধ্যক্ষ সজল মিত্র জানান, “১৯০৪ সালে রাজা রামমোহন রায়ের স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এটি নানা সংকটের মুখে পড়েছে।”
গত ছ’মাস ধরে পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে গেছে। গ্রন্থাগারের মূল প্রবেশপথ অবৈধ দখলের শিকার হয়েছে—কেউ সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে, কেউ আবার প্রকাশ্যে মাদক সেবনের আসর বসিয়েছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো, বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মারের নিচেই রান্নার জন্য আগুন জ্বালানো হচ্ছে, যা যে কোনো মুহূর্তে বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত বহু মূল্যবান বই ও ঐতিহাসিক সামগ্রী যে কোনো সময় আগুনের গ্রাসে চলে যেতে পারে, যা মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
গ্রন্থাগারের সভাপতি, চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য নারকেলডাঙা থানার পাশাপাশি স্থানীয় পুরসভা প্রতিনিধি ও বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। তবে সমস্যার সমাধানে দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে উঠেছে।
দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা শেষ পর্যন্ত পুলিশের দ্বারস্থ হন। শনিবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজন অবৈধ দখলদারকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু এলাকাবাসীর মনে প্রশ্ন, এটি কি শুধু সাময়িক উদ্যোগ, নাকি সমস্যার স্থায়ী সমাধান মিলবে?
এলাকার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অয়ন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জানানোর আগেই আমি এই সমস্যার বিষয়ে অবগত ছিলাম।’’
ইতিমধ্যেই পুলিশকে জানানো হয়েছিল, এবং তারা পদক্ষেপ নিয়েছে।’’ তবে স্থানীয়দের দাবি, শুধু সাময়িক ব্যবস্থা নিয়ে থেমে থাকলে সমস্যার সমাধান হবে না। ঐতিহাসিক এই স্থানের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
Leave a comment
Leave a comment