সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
রাজ্য সরকার নির্ধারিত সহায়ক মূল্যের বেশি দামে আলু কেনা হচ্ছে সুফল বাংলা প্রকল্পে। রাজ্য কৃষি বিপণন দপ্তরের আওতাভুক্ত হুগলি জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি আলু চাষীদের থেকে সরাসরি সুফল বাংলা প্রকল্পের জন্য জ্যোতি আলু কিনছে কেজিপ্রতি 11 টাকা অর্থাৎ কুইন্টাল প্রতি ১১০০ টাকা দরে। ইতিমধ্যেই আলুর জেলা, হুগলির আটটি ব্লকে (বলাগড়, পান্ডুয়া, ধনেখালি, পোলবা-দাদপুর, গোঘাট ১ এবং২, পুড়শুড়া ও খানাকুল) এই আলু কেনার কাজ চলছে। উল্লেখযোগ্য ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলুর সহায়ক মূল্য কুইন্টাল প্রতি ৯০০ টাকা করার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। এই অবস্থায় হুগলির আলু চাষিরা কুইন্টাল প্রতি ২০০ টাকা বেশি দরে সুফল বাংলা প্রকল্পে আলু বিক্রি করতে পেরে স্বভাবতই খুশি। একইসঙ্গে আলুর অতি ফলনের জেরে অভাবী বিক্রির রুখতে কৃষি বিপণন দপ্তর তথা সুফল বাংলা প্রকল্পের এই পদক্ষেপ যথেষ্ট ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আলু চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি আলু কিনে হুগলি জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি নিজেরাই হিমঘরে আলু পৌঁছে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে চাষীকে বাড়তি খাটনি করতে হচ্ছে না। গোটা ব্যবস্থাপনায় সভাপতি খুশি আলু চাষিরা। তাদের মতে, বাজারের দাম এবং সরকারি সহায়ক মূল্যের তুলনায় সুফল বাংলা প্রকল্পে বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রকল্পে আরো বেশি আলু বিক্রি করতে পারলে ভালো হতো। কৃষি বিপণন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে আপাতত চাষী প্রতি ৭০ কেজি আলু কেনার কাজ চলছে।
প্রসঙ্গত, এবারে আলু ফলন এতটাই বেশি এবং তার পাশাপাশি ধসা রোগের প্রকোপ না পড়ায় কিছুটা হলেও লাভবান হয়েছেন রাজ্যের আলু চাষিরা। কিন্তু আলুর অতিফলনের জেরে আশঙ্কা অন্যত্র। ফলন যদি বেশি হয় সেক্ষেত্রে অভাবী বিক্রির আশঙ্কা থাকে। যদি যথাযথভাবে আলু মজুত করা না যায় তাহলে মাঠেই মারা যেতে পারে কুইন্টাল কুইন্টাল আলু। আপাতত আলু চাষিরা লাভের মুখ দেখলেও হিমঘরে পর্যাপ্ত আলু মজুত না রাখতে পারলে লাভের গুড় পিঁপড়ে খেয়ে যাবে। আখেরে ক্ষতি হবে রাজ্যেরই মনে করছেন আলু ব্যবসায়ীরা। আলু চাষীদের কথায়, আলুর উত্পাদন খরচ বেড়েছে। তবে ফলন ভালো হওয়ায় আপাতত কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পারছেন তারা। একদিকে আলুর বেশি ফলন অন্যদিকে ধসা রোগের প্রকোপ কম হওয়ায় আলু চাষিদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে।
চলতি মরশুমে প্রায় ২৮ কোটি প্যাকেট অর্থাৎ প্রায় ১ লক্ষ ৪০ টন আলুর উৎপাদন হবে রাজ্যে বলে অগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে আলুর এই রেকর্ড উৎপাদনে হিমঘর ভাড়ার যোগান দিতে গিয়ে আদতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আলু চাষিরাই, যুক্তি প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির।সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “হিমঘরের ভাড়া বৃদ্ধি পেলে আখেরে তা চাষীদের ঘাড়েই চাপবে। একদিকে অতি ফলন এবং অন্যদিকে ভাড়া বৃদ্ধি এই দুইয়ের কোপে সহায়ক মূল্যের বৃদ্ধির সুবিধা চাষিরা পাবেন না। তাই সবদিক বিবেচনা করে আলুর সহায়ক মূল্য বাড়ানোর জন্য ফের আবেদন করা হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে।
উল্লেখযোগ্য, আলু চাষীদের স্বার্থে আলুর সহায়ক মূল্য কুইন্টাল প্রতি ৯০০ টাকা করেছে রাজ্য। ইতিমধ্যেই আলুর অভাবী বিক্রি রুখতে সহায়ক মূল্য কুইন্টাল প্রতি আরো ৩০০ টাকা অর্থাৎ ১২০০ টাকা করার আবেদন জানিয়েছে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। সহায়ক মূল্য বাড়লে একদিকে যেমন আলু বিক্রিতে চাষীদের উৎসাহ বাড়বে তেমনি হিমঘরের ভাড়া অপরিবর্তিত রাখা হলে আখেরে আলু চাষিরাই লাভবান হবে বলে মনে করছে ব্যবসায়ী সমিতি। অন্যদিকে, প্রতি তিন বছর অন্তর হিমঘরে আলু রাখার ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। চলতি মরশুমে ইতিমধ্যেই ভাড়া বাড়ানোর আর্জি রাজ্য সরকারের কাছে করেছে হিমঘর মালিক সংগঠন। হিমঘরের ভাড়া কুইন্টাল প্রতি ১৪ টাকা বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। যদিও হিমঘর মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাড়া বাড়ানোর দাবি ছিল কুইন্টাল প্রতি ৩৩ টাকা। হিমঘর মালিক সংগঠনের বক্তব্য আলু ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই একতরফা সিদ্ধান্তের কথা বলছে। হিমঘর ব্যবসার ক্ষতি ও জড়িত বহু মানুষের রুটি-রুজির সমস্যা নিয়েও সরকারকে ভাবতে হবে রাজ্য কৃষি বিপণন দপ্তর জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোকে নিয়ে বৈঠক করে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের শীর্ষ মহলের সঙ্গে আলোচনা হবে। তারপরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।