অভিজিৎ বসু
সোমবার সারা দেশের সঙ্গে এই রাজ্যেও পালিত হবে ইদ উৎসব। আর সেই উৎসব নিয়েই এখন তোড়জোড় শুরু হয়েছে। উৎসব শুরুর আগেই বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এক প্রেস বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি জানান যে, ঈদ হবে এর পাশে রামনবমী ও পালিত হবে রাজ্যে জুড়ে। বাংলার চিরাচরিত ঐতিহ্যকে রক্ষা করে শান্তি ও সম্প্রীতির বাতাবরণে এই উৎসব পালনের জন্য রাজ্যের সকল অংশের মানুষের কাছে বামফ্রন্ট আহবান জানাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরির সৃষ্টি করবে। সেই সব নানা প্ররোচনাও দেবে। এমন আশঙ্কাকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। কারণ ইতিমধ্য কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। আর সেই সব কিছুকেই কঠোর হাতে মোকাবিলা করতে হবে বলে বিমান বসু তাঁর প্রেস বিবৃতিতে জানান। ( হয়তো তিনি মালদার মোথাবাড়ির ঘটনাকে উল্লেখ করতে চেয়েছেন একটু স্পষ্ট করে না লিখে)। জনগণের কাছে তাঁদের আবেদন যে এই ধরনের পরিস্থিতিতে কঠোর হাতে সরকারকে মোকাবিলা করতে হবে। রাজ্যের সর্বত্র এর জন্য তিনি বামফ্রন্ট কর্মীদের সতর্ক থাকারও আবেদন জানিয়ে বলেছেন আপনারা সবাই সতর্ক থাকুন। বাংলার সম্মানকে রক্ষা করতে হবে যে কোনোও মূল্যে। এই বিবৃতি প্রকাশের সাথে সাথে বামেদের দলীয় মুখপত্র গণশক্তি কাগজে ও তাদের নানা সমাজ মাধ্যমে জ্যোতি বসুর ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এর ছবি দিয়ে দুটি ভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে যে কিভাবে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিলেন তাঁরা একসময়।
সেই প্রসঙ্গে বহু বছর আগে হুগলীর ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়ায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরী হয়েছিল ৷ তখন রাজ্যে যুক্তফ্রন্ট সরকার, পুলিশমন্ত্রী জ্যোতি বসু খবর পেয়ে সেই রাতেই চলে আসেন ঘটনাস্থলে ৷ পুলিশের জিপে চেপে, পুলিশের মাইক হাতে নিয়ে বলতে থাকেন, “আমি পুলিশকে অর্ডার দিয়েছি, কাউকে ধর্মস্থানে হামলা করতে দেখলেই কোনো রং না দেখে সোজা মাথায় গুলি করতে”। সেই রাতেই দাঙ্গা থেমে গিয়েছিল।
তারপর ৭৭ সালে এলো বামফ্রন্ট সরকার, মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ৷ তাঁর সময়কালে এই রাজ্য কখনও দাঙ্গা দেখেনি৷ ১৯৮৪তে সারা দেশে শিখ দাঙ্গা, ছদ্মবেশে কলকাতার অলিগলি ঘুরছেন বিমান বসু, যাতে দাঙ্গা না লাগে। পরবর্তীতে ১৯৯২ তে বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় সারা দেশে যখন আগুন জ্বলছে, তখনও বাংলার বুকে কোনো আঁচ পড়েনি। পাড়ায় পাড়ায় রাত জেগে পাহারা দিয়েছিলেন পার্টির কমরেডরা।মহাকরণে এক সাংবাদিক জ্যোতিবাবুকে প্রশ্ন করেন,“আপনাদের রাজ্যে দাঙ্গা হয়না কেন?” স্বল্পভাষী জ্যোতি বসু ছোট্টো বাক্যে উত্তর দেন, “সরকার চায় না তাই”।
পরবর্তীতে তাঁর উত্তরসূরী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অমোঘ উক্তি, “এই রাজ্যে দাঙ্গা করতে এলে মাথা ভেঙে দেবো”। ২০০২ এর দাঙ্গা ছুঁতে পারেনি বাংলার মাটি। বামফ্রন্ট সরকারকে সরিয়ে পরিবর্তণের বাংলার চোদ্দ বছর সম্পূর্ণ হলো। বাংলার মাটিতে দাঙ্গা আটকানোর আজ আর কেউ নেই। এই লেখা এখন সমাজ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য এই বাংলাকে তিনি আগলে রেখেছেন বুক দিয়ে। কোনোও অশান্তি হতে তিনি দেবেন না এই বাংলায়। কিন্তু কেনো ঈদ মোবারক এর আগেই এই নানা কথা ওঠে বর্তমানে। শুধুই কি রাম নবমী আর এই খুশির ঈদের অনুষ্ঠান পালন তো এই কিছুদিন ধরেই হচ্ছে না রাজ্যে। রাম নবমী না হয় হাল আমলে এসেছে রাজ্যে বিজেপির হাত ধরে কিন্তু সেই খুশীর ঈদ। সারা মাস রোজা করার পর একটুকরো চাঁদ দেখে একে অপরকে জড়িয়ে ধরা। সেই কাদের ভাইয়ের বাড়িতে এক পাড়ার মোড়ে আড্ডা দেওয়া সেই সমীর এর নিমন্ত্রন পাওয়া। সেই দুপুর বেলায় শামীম এর বাড়িতে গেলে ওর মায়ের হিন্দু বাড়ীর লোকদের যত্ন করে খেতে দেওয়া। তাহলে কেনো ঈদ মোবারক এর আগে এমন সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া। সত্যিই কি তাহলে যুগ বদলে যাচ্ছে। সমাজ বদলে যাচ্ছে। মানুষ বদলে যাচ্ছে। শামীম, বদরু চাচা, এরাও বদলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। বদলে যাচ্ছে বাংলার এই রাজনীতিও। যে রাজনীতিতে হিংসা, অবিশ্বাস আর ঘৃণা ঘুরে বেড়ায়। আর তাই বোধহয় খুশীর ঈদ এর আগে সতর্ক বার্তা দিতে হয় এক রাজনৈতিক দলের ফ্রন্টের তরফে। যে বার্তা দেন সেই বহু যুদ্ধের সাক্ষী বিমান বসু। সত্যিই অসাধারণ এই রাজনীতি আর ধর্ম নিয়ে দলাদলি। কবে যে এর শেষ হবে কে জানে। মানুষ মানুষের জন্য। ধর্ম আর রাজনীতির জন্য নয় এটা যে কবে বুঝবে সবাই কে জানে। ঈদ মোবারক। ভালো থাকবেন সবাই।
