অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি এক আলোচনাসভায় রাজ্যের মুসলিম ভোটারদের রাজনৈতিক প্রবণতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি দাবি করেন, রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায় এখন শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে নয়, বরং উন্নয়নকে প্রধান বিষয় ধরে ভোট প্রদান করছে। তাঁর মতে, একসময় মুসলিম ভোটারদের নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করত, কিন্তু বর্তমানে তারা অধিক সচেতন হয়ে উন্নয়নের দিকটিও গুরুত্ব দিচ্ছে।
একটি জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘আগে মুসলিম ভোটারদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা হত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। মুসলিমরা এখন শুধুমাত্র ধর্ম নয়, রাজ্যের উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভোট দিচ্ছে।’’ তিনি আরও জানান, বিজেপির শাসনকালে অসমের মুসলিম সমাজের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামো খাতে রাজ্যের বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা মুসলিম সমাজের একাংশ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে।
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, মাদ্রাসাগুলির আধুনিকীকরণ, বাল্যবিবাহ রোধ এবং মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাঁর সরকার যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে। অতীতে যেসব সমস্যা মুসলিম সমাজকে পিছিয়ে রেখেছিল, সেগুলোর সমাধানে সরকার বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তাঁর মতে, এইসব উদ্যোগের ফলে মুসলিম সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা এখন নিজের ভবিষ্যৎ গঠনের বিষয়ে আরও সাবলীল সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হচ্ছে।
তাঁর এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, এটি বিজেপির নতুন রাজনৈতিক কৌশল, যেখানে মুসলিম ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের মতে, বিজেপি অতীতে মুসলিমদের সম্পর্কে যে মনোভাব পোষণ করেছিল, তা থেকে সরে এসে এখন এক নতুন অবস্থান গ্রহণ করছে, যা আগামী নির্বাচনের জন্য একটি কৌশল মাত্র। অন্যদিকে, বিজেপি সমর্থকরা মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজ্যের মুসলিম সমাজ যদি সত্যিই ধর্মীয় গণ্ডির বাইরে এসে উন্নয়নকেই প্রধান বিষয় ধরে ভোট প্রদান করতে শুরু করে, তবে অসমের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ যদি বিজেপির প্রতি আকৃষ্ট হয়, তবে বিরোধী দলগুলোর ভোটব্যাংকের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
তবে, এখনই কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। রাজ্যের মুসলিম সমাজের রাজনৈতিক প্রবণতা ভবিষ্যতে কোন দিকে মোড় নেয়, তা আগামী নির্বাচনের ফলাফলেই বোঝা যাবে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য যে অসমের রাজনৈতিক চিত্রপটে নতুন আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, তা অস্বীকার করা যায় না।
