সুয়ারেজ শ্রমিকদের মৃত্যু ঠেকাতে নয়া পদক্ষেপ, প্রথম পর্যায়ে চার জেলা
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
নিকাশি ও সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কারের কাজে শ্রমিক মৃত্যু আটকাতে এবার নতুন পদক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার। সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের অধীনে ন্যাশনাল একশন ফর মেকানাইজড স্যানিটেশন ইকো সিস্টেম সংক্ষেপে NAMASTE প্রকল্পের অঙ্গীভুত হয়ে সম্পূর্ণ আধুনিক যন্ত্র চালিত পদ্ধতিতে নিকাশি ও সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কারের কাজ পর্যায়ক্রমে রাজ্যের সমস্ত পুরসভা এলাকায় চালু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। প্রথম পর্যায়ে উত্তর ২৪ পরগনা দক্ষিণ 24 পরগনা হাওড়া ও হুগলি এই চার জেলার ৪৯ টি পুরসভাকে এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। নবান্নের এক পদস্থ আধিকারিক এর কথায়, রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হলো ম্যানহোল গুলিকে মেশিন হোলে পরিণত করা। মূলত সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কারের কাজে জানাযুক্ত এবং নিকাশি ব্যবস্থার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মান উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই এই স্কিম গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক। নির্দিষ্ট এলাকায় কতজন এ ধরনের শ্রমিক রয়েছেন এবং তাদের সামগ্রিক তথ্য জানতে ইতিমধ্যেই প্রথম পর্যায়ের সঙ্গে যুক্ত পুরসভাগুলি সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে। এই সমীক্ষার কাজ শেষ হলে এই প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট ডিজিটাল প্লাটফর্মে যাবতীয় তথ্য নথিভুক্ত করা হবে যেখান থেকে রাজ্য সরকার এ ধরনের শ্রমিকদের সম্পর্কে তথ্য লিপিবদ্ধ করবে। শুধু ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরি করাই নয় এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা বিশেষ স্বাস্থ্য বীমার আওতাভুক্ত হবেন। সে কারণেই রাজ্য সরকার সুনির্দিষ্টভাবে এই প্রকল্প শ্রমিকদের একটি ডেটাবেজ তৈরি করবে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, স্বচ্ছতা উদ্যমী যোজনায় এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৭০ টি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, ছোট গাড়ির যোগান মিলবে। যার জন্য ভর্তুকি যুক্ত ঋণ হিসেবে মূলধনের যোগান পাবেন প্রকল্প শ্রমিকরা। পাশাপাশি তারা নির্দিষ্টভাবে এই প্রকল্পের জন্য স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা এবং ব্যক্তিগত সেফটি কিটস পাবেন। সংশ্লিষ্ট পুরসভার মাধ্যমে এই প্রকল্পের কাজ পরিচালিত হবে। ইতিমধ্যেই যার প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। স্বচ্ছতা উদ্যমী যোজনা অনুযায়ী প্রতি এক লক্ষ বসতিতে ২০ জন প্রকল্প শ্রমিক থাকতে হবে। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে ট্যাংক ও বিকাশে পরিষ্কারের কাজে প্রায় ৪০০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বিষাক্ত গ্যাস, ভগ্নস্বাস্থ্য এবং উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব এই মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে বিবেচিত। কলকাতা লাগোয়া বানতলা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর ২৪ পরগনা হাওড়া হুগলি সহ একাধিক জেলায় এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুধু এ রাজ্যেই নয় উড়িষ্যার কটক বিহারের মোজাফফরপুর এলাকাতেও ও নিকাশি কাজ করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। উল্লেখযোগ্য আজ দুপুরেই আসানসোল পুর নিগমের ৮৪ নম্বর ওয়ার্ডের হিরাপুর থানার ইসমাইল এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলের ট্যাংকের কাজ করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসের বলি হয়েছেন দুই শ্রমিক। এই প্রাণহানির বিষয়গুলিকে মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যে বিশেষ প্রকল্প গৃহীত হয়েছে তার সুফল পেতে চায় রাজ্য। সে কারণেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ম্যানহোল গুলিকে মেশিন হোলে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নিয়েছে নবান্ন।