স্নিগ্ধা চৌধুরী
শান্তিনিকেতনের মুক্ত পরিবেশে পরিচয়পত্রের শৃঙ্খল! বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কর্মীদের এবার বাধ্যতামূলকভাবে গলায় ঝোলাতে হবে পরিচয়পত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় যা ছিল অকল্পনীয়, সেটাই এখন বাস্তব! উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষের নতুন সিদ্ধান্তে বিশ্বভারতীর প্রতিটি অধ্যাপক, আধিকারিক ও কর্মীকে ক্যাম্পাসে চলাফেরা করতে হলে সর্বদা পরিচয়পত্র রাখতে হবে।
এক সময় বিশ্বভারতী ছিল মুক্ত মনের মুক্ত শিক্ষার এক অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান। গুরুদেবের আদর্শে গড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ্ডির বেড়া ছিল না। অথচ আজ সেই প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের জন্য পরিচয়পত্র আবশ্যিক হয়ে গেল! সময় বদলেছে, বাস্তবতাও বদলেছে। বর্তমান প্রশাসনের মতে, নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপ একান্তই প্রয়োজনীয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে থাকবে কড়া নজরদারি। গেটের সামনে দাঁড়িয়েই নিরাপত্তারক্ষীরা যাচাই করবেন পরিচয়পত্র। সন্দেহ হলে তা স্ক্যান করেই মিলিয়ে দেখা হবে তথ্য। এমনকি ছাত্রছাত্রীদের জন্যও স্মার্ট আইডি কার্ড চালু করার ভাবনা রয়েছে, যেখানে কিউআর কোড থাকছে— এক স্ক্যানে জানা যাবে সকল তথ্য।
বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ভবনের প্রবেশপথে থাকবে নথিভুক্তকরণের খাতা, যেখানে প্রতিটি প্রবেশকারীর নাম, আসার কারণ এবং সাক্ষাতের উদ্দেশ্য লিপিবদ্ধ করতে হবে। প্রশাসনের মতে, এটি শুধুমাত্র নিরাপত্তা রক্ষার জন্যই করা হচ্ছে, যাতে অনুপ্রবেশকারীদের সহজেই চিহ্নিত করা যায়।
তবে এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে ক্যাম্পাসে বিতর্কও কম হয়নি। কেউ বলছেন, এটি আধুনিক সময়ের বাস্তবতা মেনে চলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আবার কেউ বলছেন, এভাবে কি বিশ্বভারতীর মুক্তচিন্তার ঐতিহ্যকে বন্দি করা হচ্ছে? রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা দর্শন কি এই নিয়মনীতির বেড়াজালে আবদ্ধ হতে চলেছে?
বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার স্বার্থে এই পরিবর্তন প্রয়োজনীয়। দ্রুত সমস্ত ভবনের অধ্যাপক, কর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর হবে।
এত বিতর্কের মাঝেও পরিবর্তনের স্রোত অব্যাহত। বিশ্বভারতী কি রবীন্দ্রনাথের চেতনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছে, নাকি এটি তার মৌলিক আদর্শের পরিপন্থী? উত্তর দেবে সময়!
