এবার ট্রাম্পের কোপে পড়ল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।অভিযোগ ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনা একাধিক দাবি প্রত্যাখ্যান করায় কোপে পড়েছে এই ইউনিভার্সিটি। জানা যাচ্ছে এর মধ্যে আছে ক্যাম্পাসে অ্যান্টি-সেমিটিজম বা ইহুদিবিদ্বেষ দমনে পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তন, নিয়োগ ও ভর্তির প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন, ডাইভার্সিটি অফিস বন্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্ক্রিনিংয়ে অভিবাসন দপ্তরের সঙ্গে সহযোগিতা ইত্যাদি।
গত ১৮ মাসে গাজা যুদ্ধ চলাকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যালেস্তাইনপন্থী বিক্ষোভ হয়। এই সময়ে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ করে ট্রাম্প প্রশাসন। একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলো সঠিক পদক্ষেপ করছেন না বলেও অভিযোগ তোলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষ বন্ধ করার জন্য কী কী করণীয়, সে বিষয়ে কিছু শর্তাবলিও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল সরকারের তরফে। বলা হয় সেই নির্দেশ না-মানলে তার শাস্তি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্থিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করা হবে।যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের দাবির কাছে মাথা নত করে নি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
গত বছর গাজায় যুদ্ধকে ঘিরে মার্কিন বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ইসরায়েল-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ ওঠে, যার কিছু অংশে পুলিশ ও ইসরায়েলপন্থী পাল্টা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সহিংস সংঘর্ষ হয়। ট্রাম্প ও অন্যান্য রিপাবলিকানরা এই আন্দোলনকারীদের হামাসের সমর্থক বলে অভিযোগ করেছেন। মার্চ মাসে মার্কিন শিক্ষা বিভাগ ৬০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টি-সেমিটিক হয়রানি ও বৈষম্যের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে।এরপর সরকার হার্ভার্ড এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর $৯ বিলিয়ন ফেডারেল ফান্ড পর্যালোচনার কথা বলে।গত শুক্রবার ট্রাম্প সরকার হার্ভার্ডকে একটি বিস্তারিত চিঠি পাঠায়, যেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মতাদর্শ “অডিট” করার দাবি জানানো হয়।হার্ভার্ড সেটি জনসমক্ষে প্রকাশ করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শর্তাবলির বিরোধিতা করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন এম গার্বার। হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট এক চিঠিতে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে কোনো রকম দরকষাকষি করা হবে না।তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, প্রশাসনের এ দাবিগুলো মেনে নেওয়া হবে না। গার্বার জানান, বিশ্ববিদ্যালয় নতুন তথ্য ও ভিন্ন মতামতের প্রতি উন্মুক্ত, তবে এমন কোনো শর্ত মানা হবে না, যা কোনো প্রশাসনের আইনি ক্ষমতার বাইরে। তার ভাষায়, “কোনো সরকার, সে যেই দলেরই হোক না কেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি, ভর্তি বা নিয়োগ নীতি বা গবেষণার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে পারে না।”
এর জবাবে ট্রাম্পের “জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স টু কমব্যাট অ্যান্টি-সেমিটিজম” একটি বিবৃতিতে জানায়, বহু বছরের অনুদান বাবদ $২.২ বিলিয়ন এবং অতিরিক্ত $৬০ মিলিয়ন ডলারের সরকারি চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। তাদের ভাষায়, “হার্ভার্ডের বক্তব্য আমাদের দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি গভীরভাবে চেপে বসা এমন এক সমস্যাকে তুলে ধরে যেখানে মনে করা হয় যে সরকার অর্থ দেবে কিন্তু নাগরিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব থাকবে না।”
তবে গত বছর হার্ভার্ডের উল্টো পথে হেঁটেছিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।সেখানে প্যালেস্তাইনপন্থী আন্দোলনের জেরে ৪০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান কেটে নেওয়া হয়।পরে কলাম্বিয়া পরে শৃঙ্খলাবিধিতে পরিবর্তন এনে নিরাপত্তা বাড়াতে ৩৬ জন অফিসার নিয়োগ করে। রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান এলিস স্টেফানিক হার্ভার্ডকে “নৈতিক ও শিক্ষাগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রতীক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এর ফেডারেল তহবিল বাতিলের দাবি তোলেন। তিনি হার্ভার্ডে বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘উগ্র ইহুদিবিদ্বেষ’ সহ্য করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।
Leave a comment
Leave a comment
