বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘু নেতার অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশকে কড়া কূটনৈতিক বার্তা দিল নয়া দিল্লি। নৃশংসভাবে খুন হওয়া ওই নেতার নাম ভাবেশ চন্দ্র রায়। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিদেশ মন্ত্রক অভিযোগ করেছে যে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সেদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
শনিবার এক্স সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘু নেতা শ্রী ভাবেশ চন্দ্র রায়ের অপহরণ এবং নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এই হত্যাকাণ্ড একটি ধারাবাহিক নিপীড়নের অংশ, যেখানে আগের হামলার অপরাধীরা আজও শাস্তিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং আবারও অন্তর্বর্তী সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই—তাদের দায়িত্ব হল সব সংখ্যালঘুর, বিশেষত হিন্দুদের, সুরক্ষা নিশ্চিত করা। অজুহাত খুঁজে বের করার সময় এখন নয়।”
জানা গেছে মৃত ব্যক্তি ভবেশ চন্দ্র রায় বাংলাদেশের দিনাজপুরের একটি স্থানীয় হিন্দু সংগঠনের নেতা ছিলেন এবং সমাজসেবায় সক্রিয় ছিলেন। গত জুলাই মাসের আন্দোলন ও হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ইসলামি মৌলবাদ ক্রমেই বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ। এই আবহে বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর এতে আতঙ্ক বাড়ছে এই সম্প্রদায়ের মানুষজনের মধ্যে।অনেকেই আর আশ্বাস রাখতে পারছেন না ইউনূস প্রশাসনের উপর।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও পুলিশের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে বুধবার বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট নাগাদ তিনি একটি ফোনকল পান, যা সম্ভবত অপহরণকারীদের পক্ষ থেকেই করা হয়েছিল। ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফোনকলের প্রায় আধঘণ্টা পর চার ব্যক্তি দুটি মোটরসাইকেলে এসে রায়কে তুলে নিয়ে যায় এবং তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নারাবাড়ি গ্রামে, যেখানে তাঁকে মারধর করা হয়। পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য অনুযায়ী, তাকে অচেতন অবস্থায় বাড়িতে ফেলে যায় তারা। পরে তাকে দিনাজপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাংলদেশেই যখন হিন্দুদের এই অবস্থা তখন মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ ইস্যুতে সম্প্রতি হিংসা ছড়িয়ে পড়া ও উত্তেজনা নিয়ে সরব হয় ঢাকা।তা নিয়ে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।একদিন আগেই তার জবাব দিয়েছে দিল্লি।ভারতের বিদেশ মন্ত্রক মুর্শিদাবাদে সংঘটিত হিংসা নিয়ে বাংলাদেশের এমন নিন্দার জবাব দিয়ে ঢাকার এই বক্তব্যকে ‘অনাবশ্যক মন্তব্য’ ও ‘ভণ্ডামি’ বলে আখ্যা দিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, “বাংলাদেশের এই মন্তব্য ভারতের প্রতি একটি প্রচ্ছন্ন ও কপট ইঙ্গিত, যেখানে বাংলাদেশে চলা সংখ্যালঘু নিপীড়নের বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের সঙ্গে একে তুলনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ, সেখানে এমন অপরাধের দায়ে অভিযুক্তরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
বাংলাদেশকে নিজের দেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিয়েছে বিদেশমন্ত্রক।গত মাসেই বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সংসদে জানান যে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরুর পর থেকে সংখ্যালঘুদের উপর ২,৪০০টি হিংসার ঘটনা ঘটেছে, এবং ২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত ৭২টি এমন ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
Leave a comment
Leave a comment