“মুখে বড় বড় কথা নয়, অ্যাকশনে বিশ্বাসী ভারত”—এই নীতিতেই চলছে বর্তমান সময়ের ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযান। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জবাব দিয়েছে ভারত, ঘরে ঢুকে। ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি। এই প্রতিক্রিয়া মূলত পহেলগাঁওয়ে নিহত ভারতীয় জওয়ানদের প্রতি সম্মান এবং সিঁদুর মোছার প্রতিশোধ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাই এই অভিযানের নাম রাখা হয়েছে—অপারেশন সিঁদুর।
এই অভিযানের প্রতিটি মুহূর্তের আপডেট দেশবাসী পেয়েছে দুই বীর কন্যার কণ্ঠে—কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তবে কর্নেল সোফিয়া কুরেশির কাহিনি যেন এক বিশেষ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। কোটি কোটি ভারতবাসী তাঁর সাহস, দৃঢ়তা ও নেতৃত্বে মুগ্ধ। কেউ কেউ তো বলেই ফেলেছেন, “এমন মেয়েই হওয়া উচিত!”
কিন্তু জানেন কি, কর্নেল কুরেশির সঙ্গে ভারতের সেনা ইতিহাসের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে? তাঁর ঠাকুমার মা, অর্থাৎ প্রপিতামহীর মা, ছিলেন রানি লক্ষ্মীবাইয়ের সহযোদ্ধা। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে রানি লক্ষ্মীবাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছিলেন এই বীর নারী। এই বীরত্বের রক্তই বইছে সোফিয়ার ধমনীতে।
২০১৭ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কর্নেল কুরেশি বলেছিলেন, “আমি একজন ফৌজির সন্তান। সেনাবাহিনীর কঠোরতা ও শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়েই আমার বেড়ে ওঠা। আমার ঠাকুমার মা ছিলেন রানি লক্ষ্মীবাইয়ের সহযোদ্ধা—একজন সাহসী মহিলা যোদ্ধা।”
সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কীভাবে নিয়েছিলেন সোফিয়া? তাঁর ঠাকুর্দা, যাঁরাও সেনাবাহিনীতে ছিলেন, প্রায়ই বলতেন, “প্রত্যেক দেশবাসীর কর্তব্য সতর্ক থাকা এবং দেশের জন্য দাঁড়ানো।” এই কথাগুলিই শৈশবে সোফিয়ার মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। দেশসেবার স্বপ্ন বোনা শুরু তখনই।
সোফিয়ার জমজ বোন সায়না সুনসারা পেশায় একজন মডেল হলেও, মা তাঁদের দু’জনকেই ছোট থেকেই অনুপ্রাণিত করতেন সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য। সোফিয়ার লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট—ডিআরডিও-তে কাজ করে সেখান থেকে সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করা। আর যদি সেটা সম্ভব না হয়, তবে পুলিশে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর।
গুজরাটের মেয়ে সোফিয়া কুরেশির পরিবার দেশসেবার ইতিহাসে ভরপুর। তাঁর বাবা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ঠাকুর্দা ছিলেন সেনাবাহিনীতে, কাকা বিএসএফ-এ, এমনকি ঠাকুর্দার ঠাকুর্দাও ব্রিটিশ সেনায় ছিলেন এবং পরে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেন।
এইসব ইতিহাস আজ যেন নতুন আলোয় উদ্ভাসিত, যখন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি হয়ে উঠেছেন অপারেশন সিঁদুর-এর অন্যতম মুখ। তাঁর নেতৃত্ব, রক্তে বইতে থাকা সাহস এবং প্রেরণাদায়ী পরিবার আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একজন দেশপ্রেমিকের পরিচয় শুধু পোশাকে নয়, উত্তরাধিকারের গৌরবে ও ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তায় গড়ে ওঠে।
