আমরা প্রতিদিন গ্লাসে জল খাই। অফিস, স্কুল, বাড়ি সর্বত্র যেখানেই যাই না কেন, জল নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক। আর বাড়িতে জল খাওয়ার জন্য সব সময় আমরা ব্যবহার করি গ্লাস। কিন্তু জানেন কি, এই অভ্যাস আমাদের শরীরে নীরবে ক্ষতি করে যাচ্ছে? বিজ্ঞান, আয়ুর্বেদ ও ধর্মীয় বিশ্বাস— সব দিক থেকে একটাই পরামর্শ দেওয়া হয় গ্লাস নয়, জলের পাত্র হোক ধাতব কলসির মতো গোলাকার!
জল, আমাদের শরীরের ৭০ শতাংশের বেশি জুড়ে থাকা এক অমূল্য উপাদান। নাহ্, এর নিজস্ব কোনও রং, গন্ধ বা স্বাদ নেই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, জল যে পাত্রে রাখা হয়, তার গুণাবলীর প্রভাব শোষিত হয় জল। অর্থাৎ আপনি যদি প্লাস্টিক, স্টিল বা লোহার গ্লাসে জল পান করেন, তাহলে সেই পাত্রের নেতিবাচক প্রভাব জল মারফত আপনার শরীরে পৌঁছাতে পারে।
একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক। জলের জন্য গ্লাসের ব্যবহার ভারতে এসেছে পর্তুগিজদের হাত ধরে। অথচ প্রাচীন ভারতীয় সমাজে, মানুষ জল পান করতেন ছোট ধাতব পাত্র বা কলসির মতো গোল পাত্র থেকে। এর পিছনে ছিল বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও আয়ুর্বেদিক ব্যাখ্যা। গোলাকার পাত্রে রাখা জল অন্ত্র পরিষ্কার রাখে এবং হজমে সহায়তা করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন পৃষ্ঠতল টান কম থাকে, তখন জল শরীরে সহজে শোষিত হয় এবং পাকস্থলী ও অন্ত্রে জমে থাকা ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। ঠিক যেমন, দুধের মতো তরলের পৃষ্ঠতল টান কম হওয়ায়, এটি ত্বকের গভীরে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে সক্ষম। ঠিক তেমনই, গোলাকার ধাতব পত্রের জল অন্ত্র পরিষ্কার করে শরীর রাখে সুস্থ ও হালকা।
ঋষি-মুনি ও সাধু-সন্তরা ব্যবহার করতেন ‘কমণ্ডলু’, যা দেখতে কিছুটা লোটার মতো এবং গোল আকৃতির। এটি কেবল ধর্মীয় প্রতীক নয়, বরং ছিল এক স্বাস্থ্যসম্মত জলের পাত্র। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, তামা, পিতল বা রূপার পাত্রে রাখা জল শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
আজ আমরা স্বাস্থ্য নিয়ে এত সচেতন। তাই আমাদের ছোট একটি পরিবর্তন যেমন জল পানের জন্য গ্লাস ছেড়ে ধাতব পত্র বা কলসি বেছে নেওয়া শরীরের পক্ষে আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে। এই বদল শুধু পেট বা হজম নয়, বরং সম্পূর্ণ দেহ ও মনের জন্যও হতে পারে এক নতুন সূচনা। তাই গ্লাসকে এখনই বলুন, টাটা বাই বাই!