সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অনুষ্ঠানে তৈরি হল শিল্প-বাণিজ্যের নয়া সম্পর্ক।
কাশ্মীর থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছিলেন ওমর আবদুল্লাহ। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাশ্মীরের “মেহমান” হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানালেন পুজোর পরেই তিনি কাশ্মীর যেতে পারেন। শুধু কাশ্মীর যাওয়াই নয় ভূস্বর্গের সঙ্গে দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতার শিল্প ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন করলেন দুই মুখ্যমন্ত্রী। পর্যটন ও ক্ষুদ্র কুটিরশিল্পে কাশ্মীর ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে মৌ স্বাক্ষরিত হবে। কাশ্মীর আসবে কলকাতায়, কলকাতাও যাবে কাশ্মীরে।
শুধু পর্যটনের নিরিখে কাশ্মীর ও বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প বা কুটির শিল্পের সম্ভারও দুপক্ষের আদান-প্রদান করা হবে। বৃহস্পতিবার নবান্নে আসেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। তাঁকে বিদায় জানাতে গিয়ে এই নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি জম্মু ও কাশ্মীর সরকার বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন ওমর আবদুল্লাহ।
জাজবাত বাংলায় আরও পড়ুন
মনে রাখতে হবে, পহেল গাওয়ের ঘটনার ঠিক পাঁচ দিন পর জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় ঘটনার নিন্দা প্রস্তাব পেশ করে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছিলেন “যে নিরীহ ২৫ জন পর্যটক মারা গিয়েছেন তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়ার কথা ছিল আমার। কারণ কাশ্মীরে আমি তাদের আহ্বান জানিয়েছিলাম, কিন্তু তাদের কফিন বন্দি হয়ে নিজের ঘরে ফিরতে হল। এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার সম্পূর্ণ দায়ভার আমার কাঁধে নিলাম।” সেই ঘটনার পর প্রায় আড়াই মাস অতিক্রান্ত। আজ নবান্নে দাঁড়িয়ে ওমর আবদুল্লার মুখে কাশ্মীরের পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ফের একবার ঘোষিত হল।
মূলত গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর থেকেই ভূস্বর্গের পর্যটন যথেষ্ট ধাক্কা খেয়েছে। ভ্রমণপিপাসু বাঙালির অন্যতম ডেস্টিনেশন ভূস্বর্গ কাশ্মীর সেকথা মাথায় রেখেই বৃহস্পতিবার কলকাতায় একটি পর্যটন মেলায় অংশ নিয়েছিলেন ওমর আবদুল্লাহ। পরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেন তিনি। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত পুঞ্চ ও রাজৌরিতে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুধু তাই নয় পহেলগাঁওয়ের ঘটনার নিয়ে দেশের মধ্যে প্রথম বিধানসভা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব পেশ করে। সে কথা মাথায় রেখেই এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী। কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি কাশ্মীর পর্যটনকে বাংলার সঙ্গে আরও বেশি করে অঙ্গীভূত করতে আবেদন জানান ওমর।
আরও পড়ুন
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর কথায় সায় দিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানান, শুধু কাশ্মীরের পর্যটনই নয় বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে ভূস্বর্গের মেলবন্ধনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাড়তি উদ্যোগ নেবে। পর্যটন এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে কাশ্মীরের সঙ্গে বাংলার নতুন মৌ সম্পাদিত হবে। বাংলার হেরিটেজ দুর্গাপুজোর এবং তার কার্নিভালে কাশ্মীর আসবে বাংলায়। স্বাধীনতা দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানেও বাংলায় কাশ্মীরকে আমন্ত্রণ জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওমর আবদুল্লার আবেদন মেনে পুজোর পর কাশ্মীরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, “কাশ্মীর হল ভূস্বর্গ। কাশ্মীরের প্রাকৃতিক শোভা থেকে জগৎ বিখ্যাত নানা রকম হস্তশিল্প বাঙ্গালিদের কাছে খুবই প্রিয়। কাশ্মীর ও বাংলার এই আত্মিক সম্পর্ককে আরও বাড়িয়ে তুলতে হবে। তার জন্য পর্যটকদের নিরাপত্তা একটা বড় বিষয়।” যদিও কাশ্মীরের নিরাপত্তার বিষয়টি জম্মু-কাশ্মীর সরকারের হাতে নেই এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারকে বাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে এবং নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে হলেও দাবি করেন মমতা।