মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত কিনা এই প্রশ্ন হোয়াইট হাউসকেই করা হোক। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে এমনটাই জানালেন দপ্তরের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য নরওয়ের নোবেল কমিটির কাছে চিঠি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম ইতিমধ্যেই সুপারিশ করেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন, ট্রাম্প একের পর এক দেশে যুদ্ধ থামিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। শুধু ইজরায়েল নয়, জুন মাসে পাকিস্তানও এই সুপারিশ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে নোবেল কমিটিকে।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লিভিট একই দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া, ইজরায়েল ও ইরান, রুয়ান্ডা ও কঙ্গো, সার্বিয়া ও কসোভো, মিশর ও ইথিওপিয়া এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের অবসান ঘটিয়েছেন। তাঁর ৬ মাসের ক্ষমতায় থাকাকালীন গড়ে প্রতিমাসে একটি শান্তি চুক্তি বা যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছেন। ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার অনেক আগেই দেওয়া উচিত ছিল।
যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করলেও, ভারত-পাক সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতিতে কোন তৃতীয় দেশের হস্তক্ষেপ বা মধ্যস্থতা ছিল না, এই কথা প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রীও সংসদে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার সময় উল্লেখ করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের নোবেল পাওয়া উচিত কিনা সেটা হোয়াইট হাউস জবাব দিক, বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্রের এহেন মন্তব্যের পেছনে যে একটি সূক্ষ্ম খোঁচা আছে, তেমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
ইন্দো-মার্কিন সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জয়সওয়াল বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এগিয়ে চলেছে। দুই দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ একই রকম। বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকে ভারত বরাবর ভারসাম্য বজায় রাখার পক্ষপাতী। দুই দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি গুলি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, আমরা তার ওপর মনোনিবেশ করছি এবং ভারত আত্মবিশ্বাসী যে উভয় দেশের সম্পর্ক আরো এগিয়ে যাবে।
পাশাপাশি রাশিয়া-ভারত সম্পর্ক নিয়ে জয়সওয়ালের
ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক দীর্ঘকালীনভাবে স্থিতিশীল। কোনও তৃতীয় দেশের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই সম্পর্ক দেখা উচিত নয়।
সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব নিয়ে ট্রাম্পের দাবি, রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ট্রাম্পের গোঁসা, ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক চাপানো, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে দুই দেশের যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপানোউতোর চলছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশমন্ত্রকের এই বক্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
নরওয়ের নোবেল কমিটি ছয়টি ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার দেয়। পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সাহিত্য ও শান্তি। তবে রাজনৈতিক প্রকৃতির কারণে বাকি পাঁচটি ক্ষেত্রের তুলনায় শান্তি পুরস্কার বহুবার বিতর্কের মুখে পড়েছে। ২০০৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ১৯৯৪ সালে প্যালেস্তাইন নেতা ইয়াসের আরাফাত এবং ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন, ১৯৭৩ সালে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার, ১৯৯১ সালে মায়ানমারের নেত্রী আং সান সু চি, ২০১৯ সালে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ, ২০০৪ সালে কেনিয়ার পরিবেশবাদী আন্দোলন কর্মী ওয়াঙ্গারি মাথাই সহ অনেকের ক্ষেত্রেই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে পরবর্তীকালে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।
তবে এই ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়া সব থেকে উল্লেখযোগ্য নাম মহাত্মা গান্ধী। গোটা বিশ্ব জুড়ে অহিংস আন্দোলনের প্রধান মুখ হয়ে ওঠা জাতির জনক পাঁচবার মনোনয়ন পেলেও কখনও পুরস্কার পাননি। ২০০৬ সালে তৎকালীন নোবেল পুরস্কার নির্বাচন কমিটির প্রধান বলেছিলেন, গান্ধীকে নোবেল শান্তি পুরস্কার না দেওয়াটাই নোবেল ইতিহাসের সবথেকে বড় অপূর্ণতা।