আর জি কর কাণ্ডে অভয়ার মৃত্যুর পর যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে জনমনে, তার মাঝেই উঠল নতুন বিতর্কের পর্দা। শোকাহত পরিবার ন্যায়বিচারের দাবিতে যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে, তখনই সামনে এল এক ভিন্ন মোড়, অভয়ার বাবার বিরুদ্ধে তৃণমূল মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মানহানির মামলা। এর আগে আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলেন কুণাল।
ঘটনার সূত্রপাত অভয়ার বাবার বক্তব্য থেকে। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, তদন্তের গতি থমকে গেছে, সিবিআই নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না, আর এর নেপথ্যে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়েছে। অভিযোগে সরাসরি কুণাল ঘোষের নামও উঠে আসে। এর জবাবেই এবার আদালতের দ্বারস্থ হলেন কুণাল। তাঁর অভিযোগ, সিবিআই তদন্তে প্রভাব খাটাতে সিজিওতে গিয়ে তিনি মিটমাটের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেছেন অভয়ার বাবা। এমনকী প্রথম থেকে তাঁদের ফোন করে মিটমাট করে নেওয়ারও অভিযোগ করেছেন অভয়ার বাবা। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কুণালের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ মিথ্যে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি সাফ জানিয়েছেন, তদন্ত এখন সিবিআই-এর হাতে, সেখানে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই। তাই অভয়ার বাবা যে অভিযোগ তুলেছেন, তার প্রমাণ তাঁকে আদালতে দিতে হবে। এর পিছনে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির হাত রয়েছে বলেও দাবি কুণালের। কেউ বা কারা অভয়ার বাবা-মাকে পিছন থেকে চালিত করছেন বলে বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। তাঁর সঙ্গে অভয়ার বাবার যা কথা হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপে যা যা তিনি লিখেছেন, তা যেন আদালতে এসে বিচারককে বলেন অভয়ার বাবা। এই আবেদনও করেছেন কুণাল।
অন্যদিকে, অভয়ার পরিবারের মতে, এই মামলা নিছক ভয় দেখানোর কৌশল। পরিবারের বক্তব্য, ন্যায়বিচারের লড়াই থেকে সরাতে এ এক বিভ্রান্তির খেলা। অভয়ার মা বলেছেন, তাঁদের সবকিছু শেষ, এখন একটাই উদ্দেশ্য, দুর্নীতির শিকড় টেনে বের করা। মামলা কিংবা হুমকি দিয়ে সেই লড়াই থামানো যাবে না। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও অভিযোগ করেছেন, গায়ের জোরে তৃণমূল সবকিছু ধামাচাপা দিতে চাইছে।
রাজনৈতিক মহলে এই মামলা ঘিরে ইতিমধ্যেই চাপা গুঞ্জন। জনমনে ন্যায়বিচারের প্রশ্ন যেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে, মানহানির মামলা সেটাকে অন্য খাতে টেনে নিয়ে যেতে পারে। জনসাধারণও প্রশ্ন তুলছে, একজন কন্যাহারা বাবা-মায়ের অভিযোগের জবাবে কি সত্যিই মামলা হওয়া উচিত?
আদালতের রায়ই ঠিক করবে অভিযোগের সত্যতা। তবে আপাতত স্পষ্ট, অভয়ার মৃত্যুর পর রাজ্যজুড়ে যে ন্যায়বিচারের ঢেউ উঠেছিল, তার ওপর পড়ল নতুন ছায়া। একদিকে শোকাহত পরিবারের অবিরাম সংগ্রাম, অন্যদিকে আদালতে মানহানির মামলা, এই দুই মঞ্চেই এখন ঘনীভূত হচ্ছে আর জি কর কাণ্ডের রাজনীতি। অভয়ার মৃত্যুর প্রশ্ন তাই আর কেবল পারিবারিক শোকের সীমায় আটকে নেই। এটি হয়ে উঠেছে রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে বড় আয়না, যেখানে একদিকে ভেসে উঠছে মানুষের ক্ষোভ, অন্যদিকে আইনের কাগজে আঁকা হচ্ছে নতুন খেলার রেখাচিত্র।
