২০২৫ সালের দীপাবলিতে মুক্তি পেতে চলেছে “থামা”। তাতে মুখ্য চরিত্রে থাকছেন আয়ুষ্মান খুরানা ও রশ্মিকা মন্দানা। ছবির টিজার ইতিমধ্যেই দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি করেছে। কারণ, এটি এক অনন্য ভ্যাম্পায়ার লাভ স্টোরি। ভারতীয় বড়পর্দায় এমন সিনেমা এর আগে খুব একটা দেখা যায়নি।
এর আগেই ‘স্ত্রী ২’ (২০২৪) ও ‘মুঞ্জা’ (২০২৪) বিশাল সাফল্য পেয়েছিল। দুটো ছবিই লোককথা ও আঞ্চলিক সংস্কৃতির ভিত্তিতে নির্মিত হওয়ায় দর্শকরা সহজেই সংযোগ খুঁজে পেয়েছিলেন। তবে ‘ভেড়িয়া’ (২০২২) দর্শকদের মধ্যে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি, কারণ উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে পশ্চিমি দানবীয় কনসেপ্ট দর্শকদের কাছে একটু বিচ্ছিন্ন লেগেছিল। ফলে প্রশ্ন উঠছে, ‘থামা’ কি ভারতীয় দর্শকদের মন জয় করতে পারবে?
ভারতীয় লোকগাথায় চুড়েল, ডাইনি, প্রেত, যক্ষিণী, পিশাচ ও নাগিনের মতো চরিত্র গভীরভাবে প্রোথিত। কিন্তু ভ্যাম্পায়ার বা ওয়্যারউলফকে এখনও পশ্চিমির আমদানি হিসেবেই দেখা হয়। এ কারণেই ‘স্ত্রী’ বা ‘নাগিন’ দর্শকদের ভয়ের পাশাপাশি নস্টালজিয়া তৈরি করতে পারে, কিন্তু ভ্যাম্পায়ার তেমনটা করে না। ফলে যদি ছবিটিকে ‘টুইলাইট’-এর নকল মনে হয়, তবে এটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
মূলধারার সিনেমায় ভারতীয় দর্শকরা এক্সপেরিমেন্টাল ধারার বিষয়ে সাধারণত সতর্ক থাকেন। ‘ভেড়িয়া’ যেমন প্রকৃতি রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখালেও, সেটির ভ্যাম্পায়ার স্টাইল দানব অনেকের কাছে পশ্চিমি অনুকরণ মনে হয়েছিল। তাই ‘থামা’-তেও যদি শুধুই ভ্যাম্পায়ার কনসেপ্টে জোর দেওয়া হয়, তাহলে দর্শকরা সিনেমা থেকে পিছু হটতে পারেন।
‘টুইলাইট’ (২০০৮) বা ‘দ্য ভ্যাম্পায়ার ডায়েরিজ’ (২০০৯–২০১৭) টিভি ও ওটিটিতে জনপ্রিয় হয়েছিল রোমান্স ও নাটকীয় কাহিনির জন্য, ভ্যাম্পায়ার উপাদান নয়। ভারতে ‘প্যায়ার কি ইয়ে এক কহানি’ (২০১০–২০১১) জনপ্রিয় হয়েছিল একই কারণে। ফলে প্রেম আর আবেগ থাকলে ভ্যাম্পায়ার কাহিনিও দর্শকের মনে জায়গা করতে পারে।
শোনা যাচ্ছে, ‘থামা’ গল্পকে প্রাচীন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আয়ুষ্মানের চরিত্র ‘আলোক’ নামে একজন ইতিহাসবিদের, যিনি ভ্যাম্পায়ারের উৎস খুঁজছেন। যদি ছবিটি লোককথার সঙ্গেই এই কাহিনি বেঁধে দিতে পারে, তবে ‘স্ত্রী ২’ (চন্দেরি লোককথা) বা ‘মুঞ্জা’ (কঙ্কনি লোককথা)-র মতোই দর্শকরা সংযোগ খুঁজে পেতে পারেন। এভাবে নির্মিত হলে এটি ‘তুম্বাড’-এর মতো কাল্ট স্ট্যাটাসও পেতে পারে।
টিজারেই ইঙ্গিত মিলেছে যে ছবিটি ১০০ বছরের সময়কাল ধরে একটি প্রেমের কাহিনি বলবে। এটি রক্তমাখা প্রেমের গল্প হলেও মূল আকর্ষণ অভিশপ্ত প্রেম ও আকাঙ্ক্ষার রোমান্স। ভারতীয় দর্শকরা সবসময়েই নিষিদ্ধ প্রেমের গল্পকে গ্রহণ করেছেন। ফলে এটি যুবসমাজের সঙ্গে সাযুজ্য খুঁজে পেতে পারে।
‘কার্তিকেয়া ২’ (২০২২), ‘হনুমান’ (২০২৪) ও ‘মহাবতার নরসিংহ’ (২০২৫)-এর মতো ছবিগুলি প্রমাণ করেছে যে ভারতীয় দর্শক এখন সংস্কৃতিগতভাবে গভীর গল্পই বেশি পছন্দ করছেন। ‘থামা’-র নামকরণও মহাভারতের অশ্বত্থামা চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত। ফলে মিথ, আধুনিকতা ও রোমান্সের মিশ্রণ এটিকে বিশেষত্ব দিতে পারে।
আয়ুষ্মান খুরানা তার অভিনয় বহুমুখীতার জন্য আগেই প্রশংসা কুড়িয়েছেন (‘আন্ধাধুন’, ‘বাধাই হো’, ‘ড্রিম গার্ল’)। অন্যদিকে রশ্মিকা মন্দানা তার ভ্যাম্পায়ার লুক এবং স্ক্রিন প্রেজেন্স দিয়ে ইতিমধ্যেই দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়িয়েছেন।
বলিউডে বারবার দেখা গেছে, নিজস্ব মিথের গল্পগুলি জনপ্রিয় হয়, কিন্তু পশ্চিমি ধারার অনুকরণ তেমন সফল হয় না। ভ্যাম্পায়ার এখনও ভারতীয় মাটিতে গেঁথে বসতে পারেনি। তবে ‘থামা’ এক অন্য রকম স্পন্দন আনছে। এটি কপি বলে মনে হচ্ছে না, বরং ভারতীয় সিনেমার সাহসী নতুন দিগন্ত উন্মোচনের চেষ্টা মনে হচ্ছে। যদি ‘স্ত্রী’ ভারতকে লোককথার ভৌতিক কমেডি দেয়, তবে ‘থামা’ হয়ত দেবে ভারতের প্রথম গথিক রোমান্স। ‘থামা’ মুক্তি পাচ্ছে চলতি বছরের দীপাবলিতে।