চার রাজ্য সরকারি অফিসারকে সাসপেন্ড ও এফআইআরের প্রশ্নে রাজ্য-কমিশন দ্বন্দ্ব অব্যাহত। FIR-এর ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু দুই অফিসারকে নির্বাচনের কাজ থেকে সরিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলেছিল রাজ্য। সাসপেন্ড বা FIR তো দূরের কথা। অসন্তুষ্ট কমিশন দিল্লিতে ডেকে পাঠায় মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে। রাজধানীতে গিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে আসেন মনোজ। চাপে পড়ে শেষমেশ চার অফিসারকেই সাসপেন্ড করতে হয়। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে এখনও FIR করেনি রাজ্য। এর আগে ওই অফিসারদের কাজের চাপ, তাঁরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন বলেও সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করে নবান্ন। কিন্তু ভবি ভোলবার নয়। কমিশন তাঁদের বিরুদ্ধে FIRই চায়। ভোটার তালিকায় বিস্তর গোলযোগের অভিযোগ। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতেই হবে। অন্যথা হলে চলবে না। নবান্নকে বুঝিয়ে দিতে পেরেছে কমিশন। বুঝেছে রাজ্যও। এবার তাই ওই চার অফিসারের বিরুদ্ধে FIR-এর জন্য সময় চেয়ে নিলেন মুখ্যসচিব।
ভোটার তালিকায় (Voter List) অবৈধভাবে নাম তোলা-সহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগে রাজ্যের চার সরকারি অফিসারকে বৃহস্পতিবারই সাসপেন্ড (Suspend) করেছে নবান্ন (Nabanna)। তবে এফআইআর করেনি। অর্থাত, নবান্ন-কমিশন দ্বন্দ্ব অব্যাহত। কমিশন সূত্রে খবর, দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের দফতরে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছে রাজ্য। নবান্ন সূত্রের খবর, কমিশনকে পাঠানো রিপোর্টে বলা হয়েছে, আপাতত চারজন অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে। এফআইআর করতে হলে আরেকটু সময় লাগবে।
কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের অফিস তথা মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, দিল্লিতে নির্বাচন সদনে কমিশনের ফুল বেঞ্চ বসে সপ্তাহে দুদিন। সেই ফুল বেঞ্চের সামনে নবান্নের এই রিপোর্ট পেশ হবে। আগামী সপ্তাহের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে নবান্নকে। ওই ফুল বেঞ্চই সিদ্ধান্ত নেবে নবান্নের রিপোর্টে তারা সন্তুষ্ট কিনা। যদি না হয়, তাহলে ফের একবার মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠাতে পারে কমিশন।
ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগে গত ৫ অগস্ট ওই চার অফিসারকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে FIR-ও করতে হবে। পরদিনই ঝাড়গ্রামের সভায় দাঁড়িয়ে কমিশনের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “ভোট তো এখনও আট মাস বাকি। এখন থেকেই অফিসারদের ভয় দেখাচ্ছ? ক্ষমতা দেখাচ্ছ? কার ক্ষমতা দিয়ে এই কাজ করছ? অমিত শাহর দালালি করছ?” মুখ্যমন্ত্রী সরকারি অফিসারদের আশ্বস্ত করারও চেষ্টা করেন। বলেন, “ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনাদের প্রটেক্ট করার দায়িত্ব আমাদের। ওরা কিছু করতে পারবে না”।
এর পরই শুরু হয়ে যায় টানাপোড়েন। রাজ্যের সচিবালয়কে ফের চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। কাউকে সাসপেন্ড না করে স্রেফ এক সহকারী ইআরও এবং একজন ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে ভোটের কাজ থেকে সরিয়ে দেয় রাজ্য। নবান্ন সুপারিশ না মানায় গত ১৩ অগস্ট দিল্লিতে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ডেকে পাঠান কমিশনের কর্তারা। মনোজকে তাঁরা স্পষ্ট করে দেন, ৭ দিনের মধ্যেই কমিশনের সুপারিশ মানতে হবে।
এর পর ২০ অগস্ট নবান্ন নির্দেশ জারি করে পশ্চিমবঙ্গ সার্ভিসেস রুলস, ১৯৭১-এর ৭(১)(b)(a) ধারায় চার অফিসারকে সাসপেন্ড করে। সেই সঙ্গে জানায়, এঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করার প্রস্তুতিও চলছে। সরকারি নির্দেশে আরও বলা হয়, সাসপেনশনের মেয়াদে এই অফিসাররা নিয়ম মেনে ভাতা পাবেন। তবে তাঁদের কন্ট্রোলিং অথরিটির কাছে রিপোর্ট করতে হবে এবং অনুমতি ছাড়া সদর দফতর ছেড়ে যেতে পারবেন না।
কমিশনের নির্দেশ এখনও পুরোপুরি মানেনি রাজ্য। বরং নির্বাচন সদনে রিপোর্ট পাঠিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের কথা উল্লেখ করে তার জন্য সময় চেয়ে নিয়েছে নবান্ন।
