“দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে আমিও পদ খুইয়ে জেলে যেতে রাজি। প্রধানমন্ত্রীকে ছাড় দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।” সংবিধান সংশোধনী (১৩০তম) বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানান, গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে টানা ৩০ দিন হেফাজতে থাকলে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা একত্রিশতম দিনে পদ হারাবেন, এই প্রস্তাবিত বিলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের জন্য কোনও রকম ছাড় নিতে অস্বীকার করেছেন।
রিজিজু বলেন, “মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাব উঠেছিল যে প্রধানমন্ত্রীর পদকে এই আইনের বাইরে রাখা হোক। কিন্তু মোদি তাতে সম্মতি দেননি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই ক্যাবিনেটে জানিয়েছেন যে তাঁকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ এসেছে, কিন্তু তিনি তা মানেননি। প্রধানমন্ত্রীও দেশের একজন নাগরিক, তাই তাঁর জন্য আলাদা সুরক্ষা থাকা উচিত নয়। আমাদের দলে বহু মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। যদি আমাদের কেউ ভুল করেন, তাঁদেরও পদ ছাড়তে হবে। নৈতিকতারও তো একটি মূল্য রয়েছে। বিরোধীরা এই বিলকে স্বাগত জানাবে যদি নীতি ও নৈতিকতাকে সামনে রাখা হয়।”
এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়ে যখন কেন্দ্র সংসদে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ করেছে। বিতর্কিত এই তিনটি বিলে প্রস্তাব করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্য মন্ত্রীরা যদি ন্যূনতম পাঁচ বছরের কারাদণ্ডযোগ্য মামলায় অভিযুক্ত হয়ে অন্তত ৩০ দিন টানা হেফাজতে থাকেন, তবে ৩১তম দিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁদের মন্ত্রিত্ব হারাতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় প্রবল হট্টগোলের মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রস্তাব দেন এই বিলগুলিকে একটি যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানোর। প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এর আগের দিন লোকসভাতেও একই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।
প্রস্তাব অনুযায়ী, এই যৌথ কমিটিতে মোট ৩১ জন সদস্য থাকবেন। এর মধ্যে লোকসভা থেকে ২১ জন এবং রাজ্যসভা থেকে ১০ জন। রাজ্যসভা বৃহস্পতিবার তাদের ১০ জন সদস্যের নামও অনুমোদন করেছে।
কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা আগামী শীতকালীন অধিবেশনে, অর্থাৎ নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে সম্ভাব্য অধিবেশনে, তাদের রিপোর্ট জমা দেবে।
বাদল অধিবেশনের শেষ দুই দিন এই বিল নিয়ে সংসদে প্রবল হট্টগোল হয়। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, কেন্দ্র এই প্রস্তাবগুলি নিয়ে যথাযথ আলোচনা না করেই সংসদে এনে পাশ করানোর চেষ্টা করছে। বিরোধী সাংসদরা অভিযোগ করেন, সরকার বিরুদ্ধ মতামত দমিয়ে রেখে আইন চাপিয়ে দিতে চাইছে।
বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন যে, আইনটি কার্যকর হলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে বিরোধী নেতাদের পদ থেকে সরানো হতে পারে। তাঁদের মতে, “এই আইনকে শাসক দল বিরোধী নেতাদের দুর্বল করতে ব্যবহার করতে পারে। ন্যায্য বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই কেবলমাত্র হেফাজতের ভিত্তিতে পদচ্যুত করা গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিপজ্জনক।”
অন্যদিকে বিজেপি ও সহযোগী দলগুলির সাংসদরা এটিকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের মতে, এটি রাজনীতিতে “শূন্য সহনশীলতা”র বার্তা দেবে দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।
বিলটি নিয়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক ঝড় উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর নিজের জন্য ছাড় না নেওয়া রাজনৈতিকভাবে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। তবে বিরোধীরা আশঙ্কা করছে, এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি বিতর্ক তৈরি হতে পারে।

