ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হয়েছিল ভারত। তবে সহ্য করতে হয়েছে দেশভাগের যন্ত্রণাও। স্বাধীনতা লাভের পরপরই পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে তখন বাস্তুহারা মানুষের ভিড়। রাজনৈতিক পরিস্থিতিও উত্তাল। এরই মাঝে উদ্বাস্তু আন্দোলন চাপ বাড়িয়েছিল তৎকালীন রাজ্য প্রশাসনের। স্বাধীনতার আগের দুর্ভিক্ষের রেশ কাটতে না কাটতে, তখন দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। বাজারের চড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে আমজনতার। এর উপর জমিদার-জোতদারদের দাপটে ফসল ফলিয়েও চাষিরা তখন অভুক্ত। এমনই সংকটকালীন পরিস্থিতিতে ১৯৫৯ সালের ৩১ আগস্ট বামপন্থীরা তাদের খাদ্য আন্দোলনকে ঘিরে ডাক দিয়েছিল কলকাতায় সমাবেশের।
বামপন্থীদের ডাকে সেদিনের মিছিল শহিদ মিনার থেকে যখন ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের খাদ্য দফতরের দিকে এগোচ্ছে, সেই সময়ই নির্বিচারে লাঠি ও গুলি করেছে পুলিশ। গ্রাম বাংলার অভুক্ত মানুষ আতঙ্কে পালিয়ে বাঁচতে ঢুকে পড়েছিল শহরের অলিগলিতে। অভিযোগ, সেখানেও লাঠির আঘাতে শহিদ হতে হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।
বামপন্থীদের ডাকা সেদিনের খাদ্য আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া বহুমুখী বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নুরুল ইসলামের।
নুরুল সহ সেদিনের আন্দোলনে শহিদদেরদের স্মরণে রবিবার শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিনটির স্মরণে, নিজের এক্স হ্যান্ডলে লম্বা পোস্ট করেছেন তিনি। সেখানে কড়া সমালোচনাও করেছেন বামপন্থী সহ বিরোধীদের।
এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ”খাদ্যের অধিকার মানুষের চিরন্তন অধিকার। আমাদের বিরোধীরা এই অধিকারকে সম্মান দেয় না বলে আমার খারাপ-লাগা আছে। বামপন্থীরা এক সময় খাদ্য আন্দোলনের ভান করেছিল, কিন্তু সরকারে থাকাকালীন মানুষকে অনাহারে মেরেছে। আমলাশোলের মতো ঘটনার কথা আমরা ভুলিনি। আর, বিজেপি তো ভাষায়-ও মারে, ভাতেও মারে। সব টাকা দিল্লিতে আটকে তারা বাংলার মানুষকে উপোস করিয়ে শেষ করতে চায়।”
খাদ্য আন্দোলনের শহিদদের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে গিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকার কী কী করেছে তার বিস্তারিত তথ্যও তুলে ধরেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। দাবি করেছেন তাদের সরকার রাজ্যের মানুষের খাদ্য সুরক্ষার জন্য যা করেছে, তা আজ সারা দেশের মডেল।
তিনি লিখেছেন, ”আমরাই চালু করেছি ‘খাদ্যসাথী’র মতো যুগান্তকারী প্রকল্প, যার আওতায় রাজ্যের ৮ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ আজ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রেশন পাচ্ছেন। এর জন্য আমরা খরচ করেছি ১ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকা”।
‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পে, গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৭ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ বাড়ির দোরগোড়ায় খাদ্যশস্য গ্রহণ করছেন। বাকি উপভোক্তারা তাঁদের সুবিধা ও পছন্দ অনুযায়ী রেশন দোকান থেকে খাদ্যশস্য গ্রহণ করছেন। এই বাবদ আমরা খরচ করেছি ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়াও,”মা” প্রকল্পে গরীব মানুষদের দুপুরের খাবার মাত্র ৫ টাকায় দেওয়া হচ্ছে”।
খাদ্যসাথী প্রকল্পের জন্য চালের জোগান করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গত বছর ৫৬.৩৬ লক্ষ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করেছে, যা ১৭ লক্ষ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উপকৃত করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, রাজ্যের ২ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার বাইরে এসেছে খাদ্যসাথী প্রকল্পের কারণে।