গ্রিসের এক গুহার দেয়ালে প্রায় ৬০ বছর আগে যে রহস্যময় খুলি পাওয়া গিয়েছিল, তা নিয়ে নতুন গবেষণায় বড় তথ্য সামনে এসেছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পেট্রালোনা খুলির বয়স অন্তত ২,৭৭,০০০ বছর। আর এটি সম্ভবত এক প্রাচীন ও বিলুপ্ত মানব প্রজাতির নিদর্শন, যারা নিয়ান্ডারথালদের (Homo neanderthalensis) সঙ্গে একই সময়ে বসবাস করত।
ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান পেলিওনটোলজি-এর ভূ-কালতত্ত্ববিদ ক্রিস্টোফ ফালগুয়েরেস ও তাঁর দল লিখেছেন,
“গঠনগত দিক থেকে পেট্রালোনা খুলি আধুনিক মানুষ ও নিয়ান্ডারথালদের থেকে আলাদা, বরং এটি আরও প্রাচীন একটি গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। নতুন বয়স নির্ধারণ এই প্রজাতির অস্তিত্বকে আরও শক্তিশালী প্রমাণ দেয়।”
১৯৬০ সালে থেসালোনিকির কাছে পেট্রালোনা গুহা থেকে খুলি উদ্ধার হয়। গুহার অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশে, গুহার দেয়ালের সঙ্গে লেগে খুলিটি দীর্ঘ সময় ধরে ক্যালসাইট স্তরে ঢাকা পড়েছিল। কপালের মাঝ বরাবর এক টুকরো স্ট্যালাগমাইট শিংয়ের মতো বেরিয়ে আসে। নিচের চোয়াল না থাকলেও, এভাবে সংরক্ষিত হওয়ায় খুলিটি প্রায় অক্ষত অবস্থায় থেকে যায়।
বিভিন্ন গবেষণায় খুলির বয়স একেক সময়ে ১,৭০,০০০ থেকে ৭,০০,০০০ বছর ধরা হয়েছিল। গঠনের ভিত্তিতে কেউ একে আধুনিক মানুষ, কেউ নিয়ান্ডারথাল, আবার কেউ হোমো হাইডেলবার্গেনসিস বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু সঠিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক থেকেই গিয়েছে।
ফালগুয়েরেস ও তাঁর দল গুহার খনিজ পদার্থ নিয়ে ইউরেনিয়াম-থোরিয়াম ডেটিং পদ্ধতিতে সঠিক বয়স নির্ধারণের চেষ্টা করেন। গুহায় ফোঁটা ফোঁটা করে স্তরে স্তরে ক্যালসাইট জমা হয়, যার ভেতরে ইউরেনিয়াম আটকে যায়। সময়ের সঙ্গে ইউরেনিয়াম থেকে নির্দিষ্ট হারে থোরিয়াম তৈরি হয়। যেহেতু জলে থোরিয়াম থাকে না, তাই জমে থাকা থোরিয়ামের পরিমাণ থেকে সঠিক বয়স মাপা সম্ভব হয়।
এই পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীরা খুলির উপরে সরাসরি তৈরি হওয়া প্রথম ক্যালসাইট স্তর পরীক্ষা করেন। পাশাপাশি গুহার দেয়াল থেকে নেওয়া তিনটি নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায়, প্রাচীনতম স্তরের বয়স ৫,৩৯,০০০ বছর। যদি খুলি শুরু থেকেই দেয়ালের সঙ্গে লেগে থাকত, তবে এর বয়স ২,৭৭,০০০ থেকে ৫,৩৯,০০০ বছর। আর যদি পরে সেখানে যুক্ত হয়ে থাকে, তবে বয়স ২,৭৭,০০০ থেকে ৪,১০,০০০ বছর।
খুলির গঠন আধুনিক মানুষ বা নিয়ান্ডারথালের মতো নয়। গবেষকরা মনে করছেন, এটি সম্ভবত হোমো হাইডেলবার্গেনসিস প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে যার অবস্থান মানব-পরিবার গাছে এখনও বিতর্কিত।
এই খুলি জ়াম্বিয়ার কাবউয়ে গুহা থেকে পাওয়া এক খুলির সঙ্গে অনেকটা মিল রয়েছে। কাবউয়ে খুলির বয়স প্রায় ৩,০০,০০০ বছর, এবং সেটি সাধারণত হোমো হাইডেলবার্গেনসিস হিসেবে ধরা হয়। ফলে ভবিষ্যতে পেট্রালোনা খুলিকেও একই প্রজাতির বলে স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে।
গবেষক দলের মতে, “আমাদের ফলাফল ইঙ্গিত করছে যে, কাবউয়ে খুলির মতোই পেট্রালোনা খুলিও প্রায় ৩,০০,০০০ বছর আগেকার। যা প্রমাণ করে এই প্রজাতিরা ইউরোপে মধ্য প্লাইস্টোসিন যুগের অনেকটা সময় ধরে টিকে ছিল।” সম্পূর্ণ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব হিউম্যান ইভোলিউশন-এ।
