জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আগের তত্ত্ব একধাক্কায় বদলে দিয়েছে QSO1 ব্ল্যাক হোল। নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে (JWST) ধরা পড়া ছোট লাল বস্তুটি মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কাছে এখন রহস্যের খনি। এই QSO1 আদতে একটি ব্ল্যাক হোল তথা কৃষ্ণগহ্বর। মহাকাশ ঘিরে গবেষণাকারী বিজ্ঞানী আগে বলেছিলেন, তারা আর ছায়াপথগুলি প্রথমে তৈরি হয়েছে। তারপর তারাগুলির জ্বালানি যখন ফুরিয়ে যায় ও পরে ভেঙে যায় তখন কৃষ্ণগহ্বর তথা ব্ল্যাক হোলের দেখা মেলে।
ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর ঠিক কি ব্ল্যাক হোল মহাকাশের এমন একটি বিশেষ স্থান, যেখান থেকে কোনও কিছু, এমনকি আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না। এটা তৈরি হয় খুবই বেশি পরিমাণ ঘনত্ব বিশিষ্ট ভর থেকে। এটি এর নিজের দিকে আসা সমস্ত আলোক রশ্মিকে শুষে নিতে পারে। শুধু তাই নয়, কৃষ্ণগহ্বর থেকে কোনও আলোক বিন্দুই ফিরে আসতে পারে না।
কিন্তু সম্প্রতি আবিষ্কৃত QSO1 ব্ল্যাক হোল সেই ধারণাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক রবার্তো মায়োলিনো ছিলেন নাসার পর্যবেক্ষক দলে। তিনি বলেছেন, “আগের তত্ত্বগুলির জন্য এটি সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। মনে হচ্ছে এই কৃষ্ণগহ্বরটির চারপাশে কোনও ছায়াপথ না থাকলেও তৈরি হয়েছে।”
মহাকাশের আগের কৃষ্ণগহ্বরগুলি বিগ ব্যাংয়ের পরে তৈরি হয়েছিল বলেই মনে করা হয়। মহাকাশের উত্তপ্ত, ঘন অঞ্চলগুলি তাদের নিজস্ব মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভেঙে পড়ে। প্রথম দিকে তৈরি হওয়া কৃষ্ণগহ্বরগুলি গ্যাস এবং ধূলিকণাকে একত্রিত করে ছায়াপথ তৈরি করতে সাহায্য করেছে।
নাসার JWST-তে ধরা পড়ছে QSO1 নামক একটি ছোট, লাল বস্তু। পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে এটি ১৩ বিলিয়ন বছরেরও বেশি পুরনো। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, QSO1 হল JWST দ্বারা আবিষ্কৃত বেশ কয়েকটি “ছোট লাল বিন্দু”র মধ্যে একটি।
মহাকাশ বিজ্ঞানাীদের বক্তব্য, এই বিন্দুগুলি এত লাল ও ছোট এবং উজ্জ্বল যে এগুলি সম্ভবত প্রাচীন সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণগহ্বর। সাধারণত, কৃষ্ণগহ্বরগুলি ছোট আকারেই শুরু হয় এবং পরে তারা একে অপরকে গ্রাস করে বৃদ্ধি পায়। Arxiv ওয়েবসাইট অনুসারে, মহাবিশ্বে এত বড় কৃষ্ণগহ্বর কীভাবে এত দ্রুত তৈরি হতে পারে তা নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও বিভ্রান্ত।
যদিও QSO1 অনেকটা দূরে অবস্থিত, তবুও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর চারপাশে গ্যাস এবং ধুলোর গতি পরিমাপ করেছেন। তাঁরা দেখতে পেয়েছেন যে কৃষ্ণগহ্বরটির ভর সূর্যের চেয়ে ৫ কোটি গুণ বেশি, আর চারপাশের উপাদানগুলি অর্ধেকেরও কম।
অন্য একটি পৃথক গবেষণা অনুসারে, কৃষ্ণগহ্বরের চারপাশের গ্যাস প্রায় সম্পূর্ণরূপে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দিয়ে তৈরি, যা বিগ ব্যাং থেকে অবশিষ্ট উপাদান। নক্ষত্রগুলিতে খুব কম ভারী উপাদান তৈরি হয়, যা দেখতে লাগে ছোট তারার গঠনের কাছাকাছি।
QSO1 ব্ল্যাক হোল ঘিরে আর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হল, গ্যাসের একটি বিশাল মেঘ তারা তৈরি না করেই, সরাসরি একটি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরে ভেঙে পড়েছে। কিন্তু এই “সরাসরি পতনের” জন্য খুব নির্দিষ্ট অবস্থার প্রয়োজন, যা এখানে দেখা যায়নি। ফলে QSO1 ব্ল্যাক হোল ঘিরে গবেষণা আর চর্চা লেগেই রয়েছে।
