টানা বৃষ্টিপাতের জেরে বিপদসীমার উপরে বইছে যমুনা নদী। ফলে রাজধানী দিল্লির নিচু অঞ্চলে, বিশেষ করে ময়ূরবিহার ফেজ-১ সংলগ্ন ত্রাণশিবিরগুলি বৃহস্পতিবার জলে ডুবে যায়।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় দিল্লির পুরনো রেলওয়ে ব্রিজে যমুনার জলের স্তর দাঁড়ায় ২০৭.৪৮ মিটার। রাত ২ টোর পর থেকে বিপদসীমার উপরে বইছে নদী।
ভারী বর্ষণের জেরে দিল্লিতে বন্যা সতর্কতা জারি হয়েছে। এদিন রাজধানীর আলিপুর এলাকায় রাস্তার একটি বড় অংশ ধসে যায়। সিভিল লাইন্সে গাড়ি, ঘরবাড়ি জলে ডুবে যায়। কাশ্মীরি গেট ও বেলা রোড সংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে যমুনার জোয়ারে।
লোহা পুল সংলগ্ন এলাকায় নদীর জল বাঁধ ভেঙে ত্রাণ আশ্রয়কেন্দ্র প্লাবিত করেছে। যমুনা বাজার ও যমুনা খদরের মতো দুর্গত এলাকায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) ও জেলা প্রশাসন মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়।
এনডিআরএফ এক্স (X)-এ জানিয়েছে, “অবিরাম বর্ষণের পর যমুনা বিপদসীমার উপরে বইছে। যমুনা বাজার, নজফগড় ও জৈতপুর এলাকায় উদ্ধার ও মানুষজনকে নিরাপদে সরানোর কাজ চালানো হয়েছে।” তাদের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মোট ৬২৬ জন ও ১৩টি গবাদি পশুকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (ডিডিএমএ) জানিয়েছে, বুধবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত উসমানপুর, তৃতীয় পুস্তা, যমুনা খদর গ্রামে ১১ ঘণ্টাব্যাপী উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। নৌকাবাহিনীর সহযোগিতায় তিনজন মানুষ, ছয়টি কুকুর ও একটি বাছুরকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে দিল্লির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কৃষ্ণ মেনন মার্গ, ফিরোজ শাহ কোটলা রোড ও অর্জুনগড় তলিয়ে যায়, ফলে ট্রাফিক কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আগামী কয়েকদিনও বৃষ্টিপাত চলবে। বৃহস্পতিবার বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বরও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
আইএমডি হরিয়ানার কয়েকটি জেলায় (পানিপথ, সোনিপত, গুরগাঁও, ফরিদাবাদ, পলওয়াল ও মেওয়াট) লাল সতর্কতা জারি করেছে। ঘণ্টায় ১৫ মিমি-র বেশি বৃষ্টি ও ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ ও জম্মু-কাশ্মীরের জন্য কমলা সতর্কতা জারি হয়েছে।
এদিকে প্রতিবেশী পঞ্জাবে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। বুধবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৭। ২৩টি জেলায় ১.৭৫ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ১৯৮৮ সালের পর এটিকেই সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বলে আখ্যা দিয়েছে প্রশাসন। রূপনগর ও পাতিয়ালায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।
পঞ্জাব সরকার তাৎক্ষণিক ত্রাণ হিসেবে ৭১ কোটি টাকা ঘোষণা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান এক্স-এ লিখেছেন, “চলুন একে অপরকে সাহায্য করি এবং বন্যাদুর্গত পরিবারগুলির জন্য ত্রাণ তহবিলে অবদান রাখি।”