জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র শরজিল ইমাম শনিবার সুপ্রিম কোর্টে জামিনের জন্য আবেদন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ মামলায় অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি ২০২০ সালের উত্তর-পূর্ব দিল্লি দাঙ্গার পিছনে তথাকথিত বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন।
শরজিল ইমাম দিল্লি হাই কোর্টের ২ সেপ্টেম্বরের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন। বিচারপতি নবীন চাওলা ও বিচারপতি শালিন্দর কৌরের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁর জামিন আবেদন খারিজ করেছিলেন। মামলা এখনও সুপ্রিম কোর্টে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়নি। ইমামকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি।
গত মঙ্গলবার দিল্লি হাই কোর্ট একই মামলায় অভিযুক্ত উমর খালিদ, আতাহার খান, খালিদ সাইফি, মোহাম্মদ সেলিম খান, শিফাউর রহমান, মিরান হায়দার, গুলফিশা ফাতিমা এবং শাদাব আহমেদের জামিন আবেদনও খারিজ করেছে। সবাই ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা হেফাজতে আছেন।
আদালত রায়ে উল্লেখ করেছে, প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে শরজিল ইমাম ও উমর খালিদের ভূমিকা “গুরুতর”। দু’জনই সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে বক্তব্য রেখেছিলেন, যা মুসলিম সম্প্রদায়কে সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে ছিল বলে আদালতের পর্যবেক্ষণ।
পুলিশের অভিযোগ, অভিযুক্তরা দিল্লিজুড়ে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ চালানোর ষড়যন্ত্র করেছিলেন। প্রসিকিউশনের দাবি, এই পরিকল্পনায় প্রতিবাদ মঞ্চ গড়ে তোলা, ছাত্র ও স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করা, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় প্রচারপত্র বিলি, দেশজুড়ে বক্তব্য রাখা, তহবিল সংগ্রহ এবং সহিংস আন্দোলন উসকে দিতে সরঞ্জাম মজুত করার মতো কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এফআইআরে ইউএপিএ, অস্ত্র আইন এবং সরকারি সম্পত্তি আইন অনুসারে ষড়যন্ত্র, উসকানি, তহবিল সংগ্রহ, দাঙ্গা, সরকারি কর্মচারীর ওপর আক্রমণ ও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, যদি অভিযোগগুলো প্রাথমিকভাবে সত্য বলে মনে হয়, তাহলে জামিন দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ এখনও চলছে এবং সাক্ষীদের প্রভাবিত করার ঝুঁকি রয়েছে।
দীর্ঘদিনের হেফাজতের যুক্তি আদালত খারিজ করেছে। আদালত বলেছে, শুধু দীর্ঘ কারাবাসই ইউএপিএ মামলায় জামিনের ভিত্তি হতে পারে না। এই মামলায় তদন্ত অত্যন্ত জটিল, যেখানে চার্জশিটের পৃষ্ঠার সংখ্যা ৩,০০০-এর বেশি, ডিজিটাল প্রমাণ ৩০,০০০ পৃষ্ঠারও বেশি, চারটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট এবং ৫৮ জন সাক্ষী রয়েছে।
আদালত আরও জানায়, বিচার প্রক্রিয়া স্বাভাবিক গতিতেই চলা উচিত। তাড়াহুড়ো করলে অভিযুক্ত ও রাষ্ট্র উভয়েরই ক্ষতি হতে পারে। আদালতের মতে, অভিযুক্তদের অধিকারের পাশাপাশি সমাজের নিরাপত্তা ও বৃহত্তর স্বার্থকেও বিবেচনা করতে হবে।
